‘আমাকে ধরে নিয়ে যায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, এগিয়ে আসেন সাংবাদিকরা’

চবিসাসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খান তালাত মাহমুদ রাফি
চবিসাসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খান তালাত মাহমুদ রাফি

জুলাই আন্দোলনের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল না। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে বিভিন্ন সময়ে মারধর করেছে এবং মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আমার বেঁচে থাকার পেছনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) অবদান ছিল।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অডিটরিয়ামে চবিসাসের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।

রাফি বলেন, আমরা আজ রক্ত মাড়িয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা সবাই এখানে বসতে পেরেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তের বিনিময়ে। আমি একজন রাফি হয়ে ওঠার পেছনে চবি সাংবাদিক সমিতির অবদান রয়েছে।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত

তখনকার ভীতিকর পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৪ জুলাই রাতে আমরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ স্লোগান দিয়ে ১৫ জুলাই শহরের প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে যাওয়ার সময় নিষিদ্ধ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা শাটল ট্রেন আটকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় এবং আমাকে ধরে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। সেদিন সাংবাদিক সমিতি ও সাংবাদিকরা এগিয়ে আসার কারণেই আমি বেঁচে ফিরেছি। সেখানে আমাকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে। তবে সাংবাদিকরা যদি না থাকতেন, আমার সঙ্গে ভিন্ন কিছু ঘটতে পারত।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলন চলাকালীন সাংবাদিক সমিতির অনেক ভাই আমাকে দিকনির্দেশনা দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। আন্দোলনতে ক্যাম্পাস থেকে শহরে স্থানান্তর করার পেছনেও ভূমিকা ছিল চবি সাংবাদিক সমিতির। আমি প্রত্যাশা করি, চবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা ভবিষ্যতেও তাদের কাজ অব্যাহত রাখবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্ল্যা পাটওয়ারী।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক, সহকারী অধ্যাপক খ. আলী আর রাজী।

আরও পড়ুন: উত্তেজনার মধ্যে ফের বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

উপস্থিত ছিলেন চবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. মোরশেদুল ইসলাম, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন নীপু। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নাহিদুল ইসলাম, শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, ছাত্র কাউন্সিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ১০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। কয়েক দশক ধরে চবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন না থাকায় অকার্যকর চাকসুর বিকল্প হিসেবে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে চবিসাস।

শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও কলম হাতে সোচ্চার চবিসাসের সদস্যরা। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আন্দোলনের সামনে থেকে কাজ করেছে সংগঠনটি। অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে ২৮ পেরিয়ে আজ ২৯ বছরে পা দিয়েছে চবিসাস। সকাল ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কার্যক্রম শুরু হয়, যা চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা মিনিট পর্যন্ত।


সর্বশেষ সংবাদ