নিরপেক্ষতা হারিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: ছাত্র ইউনিয়ন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৩ PM , আপডেট: ০৪ মে ২০২৫, ০২:৩৮ AM

গণহত্যাকারী স্বৈরাচার হাসিনা সরকার উৎখাতের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দল নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও এখন আর এই সরকার নিরপেক্ষ অবস্থানে নেই বলে মনে করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণার মাধ্যমে এটি আরও স্পষ্ট হয়।
আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ছাত্র ইউনিয়ন থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘আমরা মনে, করি দল নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালীন সরকারের অংশ হয়ে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন জুলাই গণঅভুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। ইতোমধ্যে একজন ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করলেও বাকি দুজন ছাত্র উপদেষ্টা সরকারে রয়ে গেছেন, যারা একই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। ফলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এখন আর নিরপেক্ষ বলার সুযোগ নেই।’
এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাগীব নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করে শিক্ষার্থী উপদেষ্টারা শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে আর সরকারের অংশ হতে পারেন না। তারা এখন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। ফ্যাসিবাদী ব্যাবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের নামে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পারপাস সার্ভ কেবল নিন্দনীয় নয় দল নিরপেক্ষ সরকারকে পক্ষপাতদুষ্ট করার ফ্যাসিস্ট প্রবণতা।’
আরও পড়ুন: নতুন দলের আত্মপ্রকাশ: দলে দলে যোগ দিচ্ছেন ছাত্র-জনতা
গণঅভ্যুত্থান কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নয় উল্লেখ করে নেতাদ্বয় আরও বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে অভ্যুত্থানকে কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধি থেকে গণআন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম হিসেনে বিবেচনা না করে অর্গানোগ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এর যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেগুলো অংশগ্রহণমূলক নয়, বরং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধিকাংশই বিলুপ্ত ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির সাবেক নেতৃবৃন্দ। শুধু অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই নেতৃত্ব নির্ধারণই নয় জেলায় জেলায় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঢালাও কমিটি গঠন, আর্থিক লেনদেনে কমিটি, সরকারি অফিস ও সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পারপাস সার্ভ করা, গণঅভুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া এই প্ল্যাটফর্মকে বিতর্কিত করেছে। ফলে গণঅভুত্থানের অংশ নেয়া ছাত্র জনতার প্রতিনিধি বিভিন্ন ক্রীয়াশীল ছাত্র সংগঠন এই প্ল্যাটফর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা করে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের যে পরিনতি হয়েছে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা করলে তার চেয়েও কঠিন পরিনতি ভোগ করতে হবে।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘পুঁজিবাদ, আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর উগ্র সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্টদের প্রতি আনুগত্য প্রভুভক্ত প্রানীর মতো। রাষ্ট্রের সংস্কারের কথা বলে সাম্প্রদায়িক এবং মবভিত্তিক শাসন ব্যাবস্থা কায়েমেই সরকারের অভিপ্রায় হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। নজিরবিহীনভাবে যখন সারাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে; প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, গুম, হত্যা, ছিনতাইসহ নানান অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তখন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ফ্যাসিস্ট বাসনা থেকে বের না হতে পেরেই নিরপেক্ষতার ভান ধরা অন্তবর্তীকালীন সরকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।’
আরও পড়ুন: এনসিপির মঞ্চের সামনে জুমা আদায় করলেন ছাত্র ও অতিথিরা
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘হাজারো শহীদের রক্তস্নাত আত্মত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা উৎখাতের পর গণতান্ত্রিক রুপান্তরের পথে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই গণতন্ত্রকামী জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশের প্রক্রিয়া। কিন্তু যেকোনো পক্ষপাতদুষ্ট সরকারই স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যাবস্থার পথে অন্তরায়। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে জানাতে চাই প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার বা নির্বাচন কোনোটিই এই সরকারের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়।’
অবিলম্বে বাকি দুই ছাত্র উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সরকারে শিক্ষার্থী উপদেষ্টার প্রয়োজন হলে অভুত্থানকারী ছাত্র জনতার মধ্য থেকে নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের নগ্ন বহি:প্রকাশ জারি থাকলে অবিলম্বে জণগনের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’