সবচেয়ে বেশি বই পড়েন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয়রা, বাংলাদেশিদের পরিমাণ নগণ্য

লাইব্রেরীতে বই পড়ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক
লাইব্রেরীতে বই পড়ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক  © সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে বই পড়ার অভ্যাসে রয়েছে বৈচিত্র্যের ছাপ। কোনো দেশে বই যেন মানুষের জীবনের শিরায় শিরায় প্রবাহিত, আবার কোথাও ব্যস্ততার অজুহাতে বইয়ের পাতায় ডুব দেওয়ার ফুরসতও মেলে না। দেশের সংস্কৃতি, শিক্ষাব্যবস্থা আর সামাজিক বাস্তবতা—এসবের টানাপোড়েনে বদলে যায় বই পড়ার ধরনও। কোথাও বই হয় আত্মার খোরাক, কোথাও তা বিলাসিতার মতো আড়ালে পড়ে থাকে।

সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, বিশ্বের ১০২টি দেশের পাঠকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। এক বছরে গড়ে ১৭টি বই পড়ে শেষ করেন তারা। বইয়ের প্রতি ভালোবাসায় তাদের ঠিক পেছনেই রয়েছেন ভারতীয়রা। তারা বছরে গড়ে ১৬টি বই পড়ে শেষ করেন।

তবে এই আলোকোজ্জ্বল ছবির মাঝেও বাংলাদেশ নিয়ে খবরটি আশাব্যঞ্জক নয়। জরিপ অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি বছরে গড়ে মাত্র তিনটি বই পড়েন। বই পড়ায় তাদের সময় ব্যয় হয় মাত্র ৬২ ঘণ্টা।

৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি পাঠকের ওপর চালানো এই জরিপের ফলাফল বলছে, ই-বুক বা অডিও বুকের জনপ্রিয়তা বাড়লেও মার্কিন ও ভারতীয় পাঠকের কাছে এখনো কাগুজে বইয়ের আবেদন অটুট রয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা সত্ত্বেও তারা হাতে ধরা বইয়ের ঘ্রাণ, স্পর্শ ও সরাসরি পাঠের আনন্দেই বেশি আসক্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বই পড়া এসব দেশে শুধু বিনোদনের উপায় নয়। বরং কাজের চাপ, শিক্ষাজীবনের ক্লান্তি কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের সংকট থেকে মুক্তি পেতে বই হয়ে ওঠে তাদের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। বইয়ের পাতায় ডুবে তারা খুঁজে নেন অনুপ্রেরণা, শান্তি আর জীবনের নতুন দিকনির্দেশনা।

এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ নাগরিকরা বছরে গড়ে ১৫টি বই পড়েন এবং বইয়ের পেছনে ব্যয় করেন ৩৪৩ ঘণ্টা। এরপর রয়েছে ফ্রান্স, যেখানে একজন পাঠক বছরে গড়ে ১৪টি বই পড়েন, বইয়ের পেছনে সময় দেন ৩০৫ ঘণ্টা।

বিশ্বজুড়ে পাঠাভ্যাসের এই ইতিবাচক ধারা বই শিল্পেও ছাপ ফেলছে। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বই বাজারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, ২০২৪ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বই বাজারের আয় বছরে গড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়বে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হলে স্কুল-কলেজ পর্যায়েই বই পড়ার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। পাঠাগারের সংখ্যা ও পাঠাগারের মান উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি, মানসম্মত বই সহজলভ্য করে তুলতে হবে সাধারণ মানুষের জন্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্ম দিতে না পারলে বড় হয়ে সে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করে না। পরিবার ও সমাজকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, বই পড়ার অভ্যাস শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের মনন ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বইয়ের পাতায় ডুবে গিয়ে নতুন জগতের সন্ধান পাওয়াই হতে পারে একটি জাতির ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক।


সর্বশেষ সংবাদ