চাকসু নির্বাচন নেই ৩৪ বছর, এবার হবে তো?
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৭ PM , আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৩ AM

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ চাকসু নির্বাচন সর্বশেষ কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, স্মৃতিতে নেই সেখানের সব শিক্ষার্থীর। অধিকাংশ শিক্ষকেরও তা মনে নেই। কেননা, সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৪ বছর নেই চাকসুর নির্বাচন। ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরির্বতনের পর শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, চাকসুর নির্বাচন চাই। এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেমন আন্তরিক, তেমনই ছাত্রসংগঠনও চায় চাকসুর নির্বাচন হোক। এ অবস্থায় নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরির জন্য ইতোমধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। গত ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ ৫৫৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানা গেছে, এর আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ মার্চ চাকসু নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে নির্বাচন হয়নি। কমিটিও কোনো কাজ করেনি। এবার নির্বাচন কবে হবে, অনেকেই তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে প্রশাসন চায়, চলতি বছরই চাকসুর নির্বাচন হবে।
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়বার নির্বাচনের আয়োজন করতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর ছাত্রসংগঠনগুলোর মুখোমুখি অবস্থান, কয়েক দফা সংঘর্ষ ও উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের জন্য ৭ সদস্যের একটি নীতিমালা কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন। সদস্য সচিব হিসেবে আছেন কাউন্সিল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইউসুফ। এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর হায়দার আরিফ, চাকসু পরিচালক অধ্যাপক জাহেদুর রহমান চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমির মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, চাকসু নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চাকসু নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক আমি নিজেই। এখন পর্যন্ত ৭০% শতাংশ নীতিমালা ড্রাফট হয়েছে। আমাদের ড্রাফট ফাইনাল হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং অন্যান্য অংশীজনের সাথে আলোচনা করব। আলোচনা শেষ করে চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করব। এর পরের সিন্ডিকেটে আমরা বিষয়টি উত্থাপন করবো।
তিনি আরও বলেন, নীতিমালার ভিত্তিতে যে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে তারা নির্বাচন নিয়ে কাজ করবে এবং তারা একটি আচরণ বিধি তৈরি করবে। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার পরেই জুন মাসের দিকে একটা নির্বাচন করতে পারি।
চবির প্রায় সব ছাত্রসংগঠনই চাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। তবে তাদের মধ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে মতবিরোধ আছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের চবি শাখার সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, চাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসন কাজ শুরু করেছে, এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর। আমরা কখনোই চাকসু নির্বাচনের বিপক্ষে নই। আমরা অনেক আগে থেকেই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে চাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে দাবি জানিয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে অবশ্যই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রতিনিধি নিশ্চিত করব।
তবে বর্তমানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিবেশ নেই বলে মনে করে ছাত্রদল। আলাউদ্দিন মহসিন জানান, সুষ্ঠু পরিবেশ ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। অভ্যুত্থানের ঐক্য প্রশাসন ধারণ করতে পারেনি। প্রশাসনিকভাবে গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারা বহাল রয়েছে। এখনো তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আবার নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অপকর্মেরও বিচার হয়নি। এসবের বিচার করতে হবে। তারপর নির্বাচন।
চাকসু নির্বাচন নিয়ে চবি ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, চাকসু নির্বাচনটা হওয়া দরকার। ছাত্র প্রতিনিধি থাকা দরকার। কারণ সব জায়গায় আমাদের ছাত্র প্রতিনিধি দরকার। আমরা চাই চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বশীল পরিষদ গড়ে উঠুক। চাকসু নির্বাচনের জন্য যে বিধিমালা রয়েছে সেটি সংস্কার করা। প্রশাসন যে চাকসু নির্বাচনের জন্য যে সময় বেধে দিয়েছে তা যেন দ্রুততর সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়।
চবির বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে চাকসু নির্বাচনের। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ সব বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি, এ বছরই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক চাকসু নির্বাচন।