ক্যাম্পাসে সবাই মিলে ইফতার করলেও বাড়ির কথা মনে পড়ে

খলিদ, রোকেয়া সুলতানা, রবিউল ইসলাম নুর-ই আবদুল্লাহ ও বুশরা আজমী
খলিদ, রোকেয়া সুলতানা, রবিউল ইসলাম নুর-ই আবদুল্লাহ ও বুশরা আজমী

বছর ঘুরে আবারও এসেছে পবিত্র রমজান মাস। আরবি মাসগুলোর মধ্যে অন্যতম বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ। আত্মসংযম ও আত্মপরিশুদ্ধির মাস রমজান। কারণ এ মাসে নফসের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করেন সবাই। রাগ, হিংসা, গিবত, মিথ্যা, সন্দেহ, বিদ্বেষ, অহংকারসহ যেগুলো আমাদের খারাপ কাজে আকৃষ্ট করে, তা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেন সবাই। এ মাস নিয়ে রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন বিভাগ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অনুভূতি তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি মো. আব্দুল আলিম।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ বলেন, দিনশেষে যখন ইফতার করতে যাই, তখন বাড়ির কথা মনে পড়ে খারাপ লাগে। শৈশব থেকে আজ অনেক দূরে চলে এসেছি। তারপরও নিজের পড়াশোনা আবার টিউশনি, ব্যস্ততা নিয়ে দিন কাটছে। হলের সিনিয়র, জুনিয়র সবাই মিলে সুন্দর সময় কাটছে। রমজান মাসের মতো সারাটা বছর যেন ছাত্র, শিক্ষক, সিনিয়র, জুনিয়র সবার মধ্যে এমন নৈতিকতা, মূল্যবোধ আর আন্তরিকতা বজায় থাকে। সত্যিই, রমজান আত্মশুদ্ধির এক অপূর্ব মৌসুম, যেখানে ইবাদত। দান-সদকা আর তাকওয়ার চর্চায় আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে।

তিনি বলেন, হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রমজান মাস এসেছে কি না তা আমরা রসুলুল্লাহকে (স) দেখে বুঝতে পারতাম। অর্থাৎ অন্য সময়ের তুলনায় এ মাসে তার ইবাদত-বন্দেগি বেড়ে যেত। যার ফলে অন্যরা তাকে দেখে বুঝতেন যে, এখন রমজান চলছে। রমজান অত্যন্ত বরকত নিয়ে আসে। তাই রমজান পালনের পর আমরা যেন নতুন এক আলোকিত মানুষে রূপান্তরিত হতে পারি, এ প্রার্থনা পরম করুণাময়ের দরবারে।

ইতিহাস বিভাগ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রোকেয়া সুলতানা বলেন, সংগ্রাম, অনুভূতি ও বন্ধুত্বের এক মিশ্র রূপ। সেহরির সময় কেউ অ্যালার্মের সঙ্গে লড়াই করে, কেউ রুমমেটের ধাক্কায় জাগে। ক্যান্টিনের খাবার বা নিজে রান্নার ঝামেলা, সব মিলিয়ে সেহরি যেন এক যুদ্ধ। ইফতারই হলে রমজানের সবচেয়ে প্রাণবন্ত মূহুর্ত। সবাই মিলে খেজুর-খাবার ভাগ করে নেওয়ার আনন্দ থাকলেও, মায়ের হাতের ইফতারের স্বাদ মিস করা কষ্ট দেয়। 

তিনি বলেন, তারাবির নামাজ, রাতের কোরআন তিলাওয়াত আর একান্ত মোনাজাত মানসিক প্রশান্তি আনে। গরম, পড়াশোনার চাপ, একঘেয়ে খাবার—সবকিছু মিলিয়ে হলে রোজা রাখা ধৈর্যের পরীক্ষা। তবে এ সময়টাই আত্মনির্ভরশীলতা শেখায়, বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় করে, যা সারাজীবন মনে রাখার মতো এক অভিজ্ঞতা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, এবারের রমজান মাস বিগত সকল বছরের চেয়ে আলাদা ছিল। ধর্মীয় কোনো কাজে বাঁধা না থাকায় সব শিক্ষার্থী সুন্দরভাবে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগী করতে পারছেন। বিভিন্ন সময়ে একত্রে ইফতারের অনুভূতি প্রাণভরে উপভোগ করতে পারছি। মশার উপদ্রব একটু সমস্যার সৃষ্টি করছে। খাবারের মান যদি ভালো হতো, আরও একটু সুবিধা হতো। তবুও এবারের রমজান হোস্টেলে ভালোভাবে কাটছে।

সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুশরা আজমী বলেন, রমজানে হলজীবন এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট থাকলেও বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার, নামাজ ও রোজার সময় কাটানো সেই অভাব কিছুটা পূরণ করে। সেহরির সময় হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কেউ আগেভাগে ঘুমিয়ে পড়ে, কেউ রাত জেগে থেকে সেহরি খায়। ডাইনিংয়ের নির্দিষ্ট খাবারই ভরসা হলেও রুমমেট বা বন্ধুদের সঙ্গে মিলিয়ে কিছু বাড়তি আয়োজন করা হয়। দিনের বাকি সময় ক্লাস, পড়াশোনা ও বিশ্রামের মধ্যে কাটে। 

আরো পড়ুন: আবারও কমল সোনার দাম, ভরিতে কত?

তিনি আরো বলেন, রোজা রেখে লেকচার, গ্রুপ ডিসকাশন ও লাইব্রেরিতে সময় কাটানো ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়। বিকেলে ইফতারের প্রস্তুতি শুরু হয়। হলে নির্দিষ্ট মেনু থাকলেও অনেকে মিলে বিশেষ কিছু খাবার যোগ করে নেয়, যা ইফতারকে আরও আনন্দময় করে তোলে। ইফতারের সময় হলের কমনরুম বা ডাইনিংয়ে একসঙ্গে খাওয়ার আনন্দ আলাদা। এরপর তারাবির নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের পরিবেশ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বাড়িয়ে তোলে। সব মিলিয়ে, হলে রমজান মাস আত্মসংযম, ধৈর্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার এক সমষ্টিগত অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে, যা সারা জীবনের জন্য মনে রাখার মতো স্মৃতি হয়ে থাকে।

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নূর-ই-আব্দুল্লাহ বলেন, রমজানে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য। রমজান হলো রহমত, বরকত, মাগফিরাত আর নাজাতের পবিত্র মাস। পবিত্র এ মাসে আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে ও সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্যলাভ এবং ক্ষমা লাভের অপূর্ব সুযোগ হয়। রমজানে সিয়াম সাধনার মাসে ধনী-গরিব সবার মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে। একসঙ্গে সেহরি, একসঙ্গে জামাতে নামাজ ও একসঙ্গে ইফতার- পুরো মুসলিম জাতিকে একসূত্রে গেঁথে দেয়।


সর্বশেষ সংবাদ