শিক্ষার্থীরা যদি রাস্তাঘাটে মারামারি করে, কীভাবে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখব?
- অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
- প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৭ AM , আপডেট: ০৪ মে ২০২৫, ০২:৩৮ AM

আমরা জাতি হিসাবে কতটা বর্বর, তা প্রতিদিন রাস্তাঘাটে যা ঘটে- তা পৃথিবীর সামনে আমাদেরকে উলঙ্গ করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায় দীর্ঘ প্রায় ৪ ঘণ্টার সংঘর্ষ-ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এরপর গভীর রাতে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ ঘোষণা করে।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান নেওয়া ইবতেদায়ী শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে। এতে এক নারীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন কাঠামো দশম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে শহীদ মিনারে সমাবেশ করছেন শিক্ষকরা। সভা শেষে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে মিছিল করে যেতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ থাকায় অনেকে বেতন না পেয়ে চাকরিহারা হওয়ার আশংকায় ভুগছেন। ফলে তারাও দাবির সপক্ষে রাস্তায় নামেন এবং ভাঙচুর করেন। এরকম কোনো না কোনো ইস্যুতে প্রতিদিন রাস্তায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মারামারি, অবরোধ ইত্যাদি চলছেই।
এগুলো কি কোনো সভ্য দেশের কাজ? ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর বা নরসিংদীর চরাঞ্চলে টেঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র মারামারির সংবাদ প্রায়ই পত্রিকায় আসে। এমনকি মাইকিং করে দিনক্ষণ ঠিক করে গ্রামবাসীদের মাঝে মারামারি হয়। বাংলাদেশের সাপেক্ষে ওইসব গ্রাম যতটা বর্বর, পৃথিবীর সভ্য দেশের সাপেক্ষে বাংলাদেশ ততটা বর্বর।
এসব থেকে মুক্তির পথ হলো আমাদের জনগণকে আগে মানুষ বানাতে হবে। মানুষের মতো দেখতে হলেই মানুষ হয় না। মানুষ হতে হলে যথাযথ শিক্ষার প্রয়োজন। গত ৫৩ বছর ধরেই আমরা এ জায়গাটাতে কোনো মনোযোগ দিইনি। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। আর আজকে বিনিয়োগ করলেই কালকে ফল পাওয়া যাবে না।
দ্রুত ফল আসবে না ভেবে কোনো সরকারই এ খাতে যথাযথ বিনিয়োগ করেনি। যে ব্যক্তি দূরের জিনিস দেখতে পায় না, তাদেরকে আমরা শর্ট সাইটেড বলি। আর যে পারে, তাদেরকে আমরা ফার সাইটেড বলি। আমাদের সরকার কখনোই ফার সাইটেড ছিল না। কারণ ফার সাইটেড হতে হলে শুধু বাহিরের দৃষ্টি না, অন্তর্দৃষ্টিও থাকতে হয়।
আরো পড়ুন: শিক্ষায় যেটা বেশি জরুরি, সেটাতেই বেশি অবহেলা
আমাদের লেখাপড়ার মান কি, তা আমাদের রাস্তাঘাটই বলে দেয়। আমার এক বিদেশী বন্ধু পরিবার আছে, যারা বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আছে। তাদের মা বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে। তাই তারা মাকে নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়। এরপর তারা শ্রীলংকায় বেড়াতে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে ওদের পরিবারের ছোট থেকে শুরু করে সেই বৃদ্ধ মা, সবাই শ্রীলংকার ভূয়সী প্রশংসা করে।
ওখানকার মানুষ, পরিবেশ, ট্রান্সপোর্ট, হোটেল রেস্টুরেন্ট সবকিছু খুবই ভালো। নিজের দেশের সমস্যা নিয়ে নিজে হাজারো সমালোচনা করি। কিন্তু বিদেশি কেউ বাংলাদেশ নিয়ে সমালোচনা বা কটু কথা বললে খুব কষ্ট পাই। কষ্ট পেলে কি হবে, সমাধানের পথ বলা ছাড়া আর কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই। কবে আমরা সভ্য হব? কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি রাস্তাঘাটে মারামারি করে, কীভাবে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখব?
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)