ক্যাম্পাসহীন শিক্ষার্থীদের কথা

মো. জাবেদ ইকবাল
মো. জাবেদ ইকবাল

শাহজাদপুরের সর্বস্তরের জনগণের ঐকান্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সংসদে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৬ পাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৪০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা এবং সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টিকর্ম ও জীবনদর্শনকে এদেশের মানুষের স্মৃতিতে চির-অম্লান রাখার লক্ষ্যে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিনটি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তিসহ পাঠদান এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের অধীনে পাঁচটি বিভাগ রয়েছে, যেখানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ শতাধিক এবং প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটিতে  শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতিষ্ঠার ৮ (আট) বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো অবকাঠামো নেই। আজ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত কোনো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়নি। 

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৬ পাসের পর দ্রুত এর শিক্ষাকার্যক্রম আরম্ভের জন্য শাহজাদপুরের তিনটি কলেজ তাদের নবনির্মিত তিনটি ভবনকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম চালুর জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেয়। আর ভাড়া করা ভবনে চলে প্রশাসনিক কার্যক্রম। নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবনের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাকার্যক্রমে অংশ নিতে হয়। 

দীর্ঘ আট বছর ধরে কলেজগুলো এই সুবিধা দিলেও বর্তমানে নিজস্ব শিক্ষার্থীবৃদ্ধির কারণে তারা তা দিতে সক্ষম হচ্ছে না। উপরন্তু প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার পরেও কলেজের ভবনে ক্লাস করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের তারা প্রতিনিয়ত নানারকম ‘বুলিং’-এর শিকার হচ্ছেন- যা তাদের মানসিকভাবে ব্যথিত ও মানসিক স্বাস্থ্যকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।

গ্রন্থ ছাড়া যেমন গ্রন্থাগার কল্পনা করা যায় না, তেমনি নিজস্ব ক্যাম্পাস ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় অকল্পনীয়, অসম্পূর্ণ। স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া উচ্চশিক্ষায় সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনের সক্ষমতা ও গবেষণার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার মাধ্যমে ইতোমধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দেশব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেছে। 

২০২৩ সালের ওয়েবম্যাট্রিক্স র‌্যাংকিং অনুসারে গত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে এবং ভর্তি পরীক্ষার গুচ্ছুভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভর্তিচ্ছুদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।  

অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে তাদের ছিল সক্রিয় অবস্থান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে পদচারণার অধিকার ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব স্টেকহোল্ডার নানারকম প্রতিকূলতা মেনে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন: তারকাদের নিয়ে গুরুত্বহীন রিপোর্ট না লিখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে লিখুন

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শাহজাদপুরের সর্বস্তরের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে  জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি প্রতিনিয়ত জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করছে।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, সুশিক্ষা একটি জাতির উন্নতির পূর্বশর্ত। একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সুশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ, উচ্চশিক্ষায় ব্যয়কে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে অর্থবরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই শিক্ষাঙ্গনের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
            রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ