স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত 

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও লোগো
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও লোগো

বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (এসএসএমসি) ও মিটফোর্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রজনতাকে উৎসর্গ করে আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়।

‘মুক্তির নিঃশ্বাসে, আনন্দ উচ্ছ্বাসে মিলবো সবাই হৃদয়ের ক্যাম্পাসে’ প্রতিপাদ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বেলা ১১টায় বর্ণিল সাজে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এরপর সাড়ে ১১টায় কেক কেটে উদ্বোধন করা হয় নানা কর্মসূচি।

এর আগে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে শুরু হয় রেজিস্ট্রেশন কিট বিতরণ। এরপর সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত উদযাপিত হয় পিঠা উৎসব। এ ছাড়া সকাল সোয়া নয়টায় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ক্যাম্পাস আড্ডার আয়োজন করা হয়। বেলা ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস নিয়ে স্মৃতিচারণ এবং সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ছিল রম্য বিতর্কের আয়োজন।

দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত নাম ও দুপুরের খাবারের বিরতির পর বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। বিকাল পাঁচটায় র্যাফেল ড্র এবং কলেজে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে জনপ্রিয় দুটি ব্যান্ডের উপস্থিতিতে কনসার্ট।

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা এবং কলেজের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার স্মৃতিচারণ করে বলেন, এ ক্যাম্পাসে আমি প্রথম পা রেখেছিলাম এখন থেকে ৪৩ বছর আগে। অনেকদিন পার হয়ে গেছে। আমি এমবিবিএস পাশ করেছি ১৯৮৮ সালে। এক বছর ইন্টার্নশিপ করেছি। তারপরে আমি অনারারি ট্রেনিং করেছি এ হাসপাতালেই। ১৯৯০ সনে আমি এ ক্যাম্পাস ছাড়ি। আমার কর্মজীবনের একটা বেশিরভাগ অংশই ঢাকার বাইরে কাটিয়েছি। ফলে আমি খুব কম এসেছি এ ক্যাম্পাসে। কখনো এখানে চাকরি করার সুযোগ আমার হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ফলে আমি ক্যাম্পাসে আসতে পেরে যে কতটুকু ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমাদের প্রত্যেকের মনেই অনেকগুলো স্মৃতি সবসময় ভাসে এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের শৈশবের স্মৃতি, আমাদের স্কুলের স্মৃতি, আমাদের কলেজের  স্মৃতি এবং এই প্রতিষ্ঠানের স্মৃতি সবসময় ভাসে। তারপরের স্মৃতিগুলো আর তেমন মধুর থাকে না। উক্ত বিষয়গুলোই মধুর হয়ে থাকে। এই যে আয়োজন, আমি আশা করব এরকম আয়োজনগুলো আমরা যে যেই মতেরই হই; আমাদের কিছু কমন পরিচিতি আছে। আমাদের কমন পরিচিতি হলো আমরা ডাক্তার এবং এই ডাক্তারি আমরা শিখেছি এই প্রতিষ্ঠানে। সে অর্থে আমরা এ প্রতিষ্ঠানের ভাই-বোন। আমাদের এই পরিচয়টাই যেন বড় হয়ে ওঠে এ দিনগুলোতে। যেন কোন বিভেদ আমাদের মাঝে না বাঁধে।

উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিকেল স্কুল নাম নিয়ে ১৮৭৫ সালের ১৫ই জুন যাত্রা শুরু করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ। পরবর্তীতে ঢাকা বিভাগের ডিসি ডব্লিউ. আর. লারমিনি ১৮৮৭ সালের এপ্রিলে একাডেমিক বিল্ডিং এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৮৮৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলার গভর্নর স্যার স্টুয়ার্ট কলভিন এটি উদ্বোধন করেন। প্রায় ১৬ জন স্থানীয় রাজা ও দাতাদের সহায়তায় ১৮৮৯ সালে মেডিকেল স্কুলের বিল্ডিং প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭২ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ প্রথম পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং পরের বছর ১৯৭৩ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি এমবিবিএস ডিগ্রীর জন্য প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়। এজন্যই ৮ই ফেব্রুয়ারিকে এসএসএমসি ডে হিসেবে উদযাপন করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ