প্রাথমিকে চাকরিতে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে

সহকারী শিক্ষক মাহমুদা ও তার ভাই রানা মিয়া
সহকারী শিক্ষক মাহমুদা ও তার ভাই রানা মিয়া

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ১২ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক মাহমুদার বিরুদ্ধে। পরে চাকরি নিয়ে দিতে তালবাহানা করায় টাকা ফেরত চাইলে নানা ধরনের হুমকিও দেন চাকরিপ্রত্যাশী ভুক্তভোগী শাহনাজ পারভীনকে।

এ ছাড়া আরও অনেকের কাছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শাহনাজ পারভীন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি, গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সুবর্ণদহ গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে শাহনাজ পারভীন ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (গ্রুপ-১) পরীক্ষায় অংশ নেন। যার রোল নং ৩৭২০৯৩৪। তবে তিনি অকৃতকার্য হন।

এদিকে একই উপজেলার পরান গ্রামের আলম মিয়ার স্ত্রী চাঁদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদা বেগমের সঙ্গে শাহনাজ পারভীনের স্বামীর পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় তাদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। 

সেই সুবাদে মাহমুদা বেগম ও তার ভাই রানা মিয়া চাকরিপ্রত্যাশী শাহনাজ পারভীনের বাড়িতে আসেন এবং চাকরি পাইয়ে দিতে পারবেন বলে নানা রকম চটকদার গল্প করেন।

এ সময় তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কেরও কথা বলেন এবং চাকরি বাবদ ১২ লাখ টাকা চান। সে সময় তাদের কথায় বিশ্বাস করে শাহনাজ পারভীনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজ ও নগদ ১০ লাখ টাকা তাদের হাতে দেওয়া হয়। 

কিছুদিন পর রানা মিয়ার ০১৩০৩৯৮৯০৬৫ নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। পরে সহকারী শিক্ষক মাহমুদা বেগম ও তার ভাই রানা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, নিয়োগ-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র চূড়ান্ত হয়েছে, বাকি ৬০ হাজার টাকা দ্রুত পরিশোধ করলে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।

তাদের এমন কথায় শাহনাজ পারভীনের পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হলে তারা টাকা ফেরত চাইলে নানা রকম ভয়-ভীতি ও হুমকি দিতে থাকেন মাহমুদা ও তার ভাই রানা মিয়া।’

এ বিষয়ে শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক মাহমুদা ও তার ভাই রানা মিয়ার সঙ্গে চাকরি সংক্রান্তে মোবাইল ফোনে কথপোকথনের সব ভয়েস রেকর্ড ও টাকা লেনদেনের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে সংরক্ষণ আছে। যা ঘটনা প্রমাণ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের হাতে এই প্রতারণার শিকার শুধু আমি একাই হইনি, আমার মতো আরও অনেকেই হয়েছেন।’

এ সময় তিনি ওই অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ও তার ভাইয়ের কাছে থাকা তার মূল সনদগুলো ও টাকা ফেরতসহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, এমন অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ