গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

সোনায় মোড়ানো সাফল্য তাদের, স্বপ্নের পদক পাবেন কাল

আচার্য স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত ৫ শিক্ষার্থীর ছবি
আচার্য স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত ৫ শিক্ষার্থীর ছবি

স্বপ্ন আর প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা শুরু করেন তার বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন। বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠতে আসেন তারা। হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে লালিত স্বপ্নের পেছনে সযত্নে ছোটেন। একদিন সেটার দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন নিজ আঙ্গিনায়। বলছি বেসরকারি গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কথা। আগামীকাল সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আয়োজন হচ্ছে এই উচ্চশিক্ষালয়টির পঞ্চম সমাবর্তন। ডিগ্রি প্রদানের এই অনুষ্ঠান থেকেই আচার্য স্বর্ণপদক পাবেন পাঁচ মেধাবী গ্র্যাজুয়েট।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়মিত কাজ করছে। তবে এই ধারায় ‘কোয়ালিটি এডুকেশন’ নিশ্চিতই তাদের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই যুগোপযোগী, মানবিক মূল্যবোধ ও দক্ষতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে রাজধানীর স্বনামধন্য এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

আগামীকাল সোমবার বেসরকারি এই উচ্চশিক্ষালয়টির ৫ম সমাবর্তন থেকে ডিগ্রি পাবেন ৪ হাজার ১২৯ জন গ্র্যাজুয়েট। শিক্ষাজীবনের প্রাতিষ্ঠানিক সনদ গ্রহণ করতে শিক্ষার্থীরা জড়ো হবেন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাস। ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষারত গ্রাজুয়েটদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন। আনুষ্ঠানিক পর্বে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।

সমাবর্তনে ৫ শিক্ষার্থীকে তাদের শিক্ষা জীবনে কৃতিত্বের সাফল্য স্বরূপ দেওয়া হবে আচার্য স্বর্ণপদক।

বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুজহাত নওশীন স্বর্ণ। যিনি স্নাতক পর্যায়ে সিজিপিএ ৪ পেয়ে রেকর্ড করেছেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা হলে আচার্য স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত এই শিক্ষার্থী বলেন, ভালো করতেই হবে কিংবা প্রথম হতেই হবে, আমার এমন কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। তবে আনন্দের সাথে শিখতে চাইতাম। জীবনে এটাই আমাকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। গ্রীন ইউনিভার্সিটির কাছে সবসময় ঋণী থাকব। পাশাপাশি বিভাগের বন্ধু এবং শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে পথ দেখিয়েছিলেন। 

স্বর্ণপদক জয়ের অনুভূতি জানিয়ে এই মেধাবী শিক্ষার্থী বলেন, মানুষের পাশে থেকে শেখার আগ্রহ আমাকে এতদূর এনেছে। যখন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতাম তখন তখন একটু একটু করে শিখেছি। তবে এই যাত্রায় সব থেকে বেশি কৃতজ্ঞতা রইল বাবা এবং মায়ের প্রতি। পরিবারের প্রতিটি সদস্য আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপরে আমার দ্বিতীয় পরিবার ছিল গ্রিন ইউনিভার্সিটি এবং আমার বিভাগ। প্রতিটি বন্ধু এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের এই অর্জন উৎসর্গ করছি।

নুজহাত নওশীন স্বর্ণ, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী আচার্য স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠান থেকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে এই স্বপ্নের পদক। এরমধ্যে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান উদ্দিন পেয়েছিলেন সিজিপিএ ৩ দশমিক ৯৮। ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান কিরন পেয়েছিলেন সিজিপিএ ৩ দশমিক ৯৯ এবং আইন বিভাগ থেকে শাকিলা ইসলাম শোমা পেয়েছিলেন সিজিপিএ ৩ দশমিক ৯৭।  মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিজিপিএ ৪ পেয়ে রেকর্ড করেন শিক্ষার্থী মো. রেদোয়ান।

বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান উদ্দিন বলেন, আমার পথচলা শুরু হয় ২০১৮ সালে। পুরো অর্জনে গ্রিন ইউনিভার্সিটিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ গ্রাজুয়েশন শুরু করার সময় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাকে যতটা স্কলারশিপরে সুযোগ দেয় সেখানে গ্রিন ইউনিভার্সিটি শতভাগ অফার করে। এছাড়া আরো বেশকিছু সুযোগ প্রদান করে যেটা আমার পুরো যাত্রাকে অনেক বেশি সহজ করে দেয়।

তবে এই পথচলার শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকেই। সে সময়ে বিবিএ অনুষদের সাবেক ডিন গোলাম আহমেদ ফারুকী আমাকে বিশেষ একটি ফলাফলের জন্য অনেক বেশি প্রশংসা করেন। তখন থেকেই স্বর্ণপদক অর্জনের স্বপ্ন বকে লালন করা শুরু করি। এই যাত্রায় সেই শিক্ষক অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেন। তবে আমার পজিটিভ দিক ছিল নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতাম। এটাই আমার পথ অনেকটা সহজ করে দিয়েছিল। 

তিনি আরো বলেন, প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পাই ২০১৮ সালে। এরপরে আর কখনো এটা মিস হয়নি। প্রতিটি সেমিস্টারে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম। কখনো নিজের মধ্যে দ্বিতীয় হওয়ার চিন্তা আসেনি। এই অর্জনের জন্য বাবা মাকে ধন্যবাদ দিতে চাই এবং শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, যারা আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আমার গ্রামে এত ভলা ফলাফল কেউ করেনি। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন হয়ে থাকবে।

ইমরান উদ্দিন, শিক্ষার্থী, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে আচার্য স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত মো. রেদওয়ান অনুভূতি শেয়ার করেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। তিনি বলেন, এই ক্যাম্পাসের পরিবেশটা চির সবুজ। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এমন পরিবেশ উপহার দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে গুণগত শিক্ষা অর্জনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি এগিয়ে থাকেন। ক্যাম্পাসের চিরসবুজ এই রূপ আমাকে ভালো করতে অনেক বেশি সহায়তা করে। পাশাপাশি শিক্ষকদের সহযোগী মনোভাব আমাকে অনেক বেশি এগিয়ে দেয়।

মো. রিদওয়ান আরো বলেন, গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সব থেকে বড় দিক হলো এখানকার শিক্ষকরা খুবই হেল্পফুল। কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন যারা আমাকে ভালো করার জন্য সব সময় উদ্বুদ্ধ করতেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও পরবর্তীতে এটাই আমাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখে। একইসাথে এটা আমাকে প্রফেশনালি অনেক বেশি হেল্প করে। সব থেকে বেশি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক লায়লা ফেরদৌসি অন্তি ম্যামকে। যার সহযোগিতায় ‘ইন সাইন্টিফিকালি হাউ টু ম্যানেজ মানি’ বিষয়ে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এটা প্রফেশনালি ভালো করতেও আমাকে সহযোগিতা করে।

মো. রেদওয়ান, শিক্ষার্থী, মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

আচার্য স্বর্ণপদক ছাড়াও উপাচার্য স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন দশজন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে স্নাতক পর্যায়ের ইইই বিভাগ থেকে মো. আব্দুল মাজেদ, সিএসই বিভাগের নাফিসা আনজুম সামিয়া, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাহমুদা ইমা, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের শাহরুখ আবেদিন শিপলু, আইন বিভাগ থেকে হাবিবা মনজুর, ইংরেজি বিভাগ থেকে ফখরুল ইসলাম ফেরদৌস, সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে আরুজা ইসলাম এবং ফিল্ম টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী গোপাল বিশ্বাস। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে রওনক জাহান তন্বি এবং এলএলএম'র শিক্ষার্থী মো. আল আমিন।

গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি শিক্ষা, গবেষণা, সৃজনশীলতা এবং সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে অভিনব জ্ঞান উৎপাদনের মাধ্যমে সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সমাবর্তন থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা আগামী দিনগুলোতে তাদেরকে আরও বড় সফলতা অর্জনের পথে ধাবিত করবে।

তিনি আরো বলেন, যারা আচার্য এবং উপাচার্য স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাদের হাত ধরেই গ্রিন ইউনিভার্সিটির সুনাম, সুখ্যাতি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক। সমাবর্তনের এই স্মরণীয় দিনে সাফল্য ছুঁয়ে দেখা সব শিক্ষার্থীকে আমি শুভকামনা জানাই। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা হবেন ভালো ইঞ্জিনিয়ার, ভালো বিজ্ঞানী, ভালো শিক্ষক, ভালো সাহিত্যিক এবং সর্বোপরি ভালো মানুষ।


সর্বশেষ সংবাদ