শেখ মুজিবকে নিয়ে এক্সে পোস্ট করেছে কি পাকিস্তান সেনাবাহিনী?

রিউমর স্ক্যানার ফ্যাক্ট চেক
রিউমর স্ক্যানার ফ্যাক্ট চেক

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে ব্যাপক বিক্ষোভ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে তার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এরই প্রেক্ষিতে বুধবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ডিফেন্স পাকিস্তান’ নামে ভেরিফায়েড একটি এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্টের স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়। দাবি করা হয়, ওই পোস্টটি পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় করেছে।

প্রচারিত পোস্টে লেখা ছিল, ‘এক বিশ্বাসঘাতকের উত্তরাধিকার সমাপ্তি, ঢাকায় মুজিবুর রহমানের বাড়ি বাংলাদেশি বিপ্লবীদের হাতে ধ্বংস। বাংলাদেশি বিপ্লবীরা ধানমন্ডি ৩২ এ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ধ্বংস করেছে, যেখানে তিনি পাকিস্তান ভাঙার জন্য ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে মুজিবুর রহমানের কোনো চিহ্ন আর অবশিষ্ট থাকল না।’

আরও পড়ুন : এই সাহস আসে কোথা থেকে, প্রশ্ন মুশফিকুল ফজলের

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিপ্লবীরা এই পদক্ষেপ নেয় শেখ হাসিনার ভারতের মাটি থেকে বাংলাদেশিদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর, যা বলা হচ্ছে, দেশকে অস্থির করার ও ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য করা হয়েছিল।’

তবে এই এক্স পেজ বা পোস্ট সঠিক নয় বলে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তথ্যের সত্যতা যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘প্রচারিত পোস্টের এক্স অ্যাকাউন্টটি পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল কোনো অ্যাকাউন্ট নয়। বরং অ্যাকাউন্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল, যা একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাংবাদিক পরিচালনা করেন। প্রকৃতপক্ষে, ধানমন্ডি ৩২-এ ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।’

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তাতে ‘ডিফেন্স পাকিস্তান’ নামে একটি ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্টের স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে, উল্লিখিত অ্যাকাউন্টটি পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু ওই এক্স অ্যাকাউন্টটির বায়োতে লেখা পরিচিতি থেকে জানা যাচ্ছে, এটি অফিসিয়াল কোনো অ্যাকাউন্ট নয়। এটি একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল, যা একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাংবাদিক পরিচালনা করেন। অ্যাকাউন্টটি প্রতিরক্ষা, ভূরাজনীতি, বৈশ্বিক সংঘাত এবং আফগানিস্তান সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পোস্ট করে।

আরও পড়ুন : হাসিনা এক ভিন্ন প্রজন্মের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন : হাসনাত

অ্যাকাউন্টটির নামের পাশে ভেরিফায়েড চিহ্ন থাকলেও এটি এক্স প্ল্যাটফর্মের পেইড সাবস্ক্রিপশন মডেলের মাধ্যমে অর্জিত। ২০২১ সালে চালু হওয়া এই মডেলে নির্দিষ্ট একটি মাসিক ফি প্রদান করে যেকোনো ব্যবহারকারী ব্লু টিক ভেরিফিকেশন পেতে পারেন। তাই ভেরিফায়েড চিহ্ন থাকলেও এটি কোনো সরকারি বা অফিসিয়াল সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করে না। এ ছাড়া পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ বা তথ্য ও জনসংযোগ অধিদপ্তরের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টেও ওই দাবিতে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাংবাদিকের ব্যক্তিগত এক্স প্রোফাইলে প্রচারিত পোস্টকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল পোস্ট দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।


সর্বশেষ সংবাদ