জাতীয় পাট দিবস: সোনালি আঁশের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ
- মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১০:০৭ PM , আপডেট: ০৪ মে ২০২৫, ০২:৩৮ AM

৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস। এই দিনটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ এবং টেকসই শিল্পায়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একসময় পাট ছিল দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য, যা আমাদের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এবং কৃত্রিম তন্তুর বিস্তারে এই শিল্প নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তা সত্ত্বেও, পাট তার ঐতিহ্য হারায়নি। বরং পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাটের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।
পাট বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশ, যা একসময় "সোনালি আঁশ" নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার আগে ও পরেও এটি দেশের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পণ্য ছিল। ১৯৭০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম তন্তুর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় পাটশিল্প সংকটে পড়ে। অনেক মিল বন্ধ হয়ে যায়, কৃষকরা বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তবে বর্তমান সরকার পাটখাতকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ‘জুট পলিমার ব্যাগ’ এবং পাটজাত পণ্য ব্যবহারে বাধ্যতামূলক আইন।
জাতীয় পাট দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রচার, চাষিদের উৎসাহিত করা, শিল্পের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং নতুন বাজার তৈরির পরিকল্পনা করা। সরকার এ খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণ, আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে পাটশিল্পের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো: (১)কাঁচামালের সংকট: কৃষকদের জন্য পাট চাষ লাভজনক না হলে উৎপাদন কমে যাবে। (২)প্রযুক্তির অভাব: অনেক পুরনো মেশিন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। (৩) বাজারজাতকরণ সমস্যা: আন্তর্জাতিক বাজারে কৃত্রিম তন্তুর আধিপত্য থাকায় পাটজাত পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকে।
তবে এর বিপরীতে রয়েছে সম্ভাবনার দুয়ারও—(১)পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বাড়ছে। (২)পাট দিয়ে তৈরি ‘জুট পলিমার ব্যাগ’ পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। (৩)ইউরোপ ও চীনসহ অনেক দেশ প্লাস্টিকের বিকল্প খুঁজছে, যা পাটের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি করতে পারে।
জাতীয় পাট দিবসের সফলতা তখনই অর্জিত হবে, যখন এ খাতে দীর্ঘমেয়াদী নীতি বাস্তবায়িত হবে। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন, কৃষকদের জন্য প্রণোদনা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন, এবং আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে।
পাট শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, বরং এটি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চালিকা শক্তি। জাতীয় পাট দিবসের মাধ্যমে আমরা যদি এই শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারি, তাহলে আবারও ‘সোনালি আঁশ’ তার গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
লেখক: পাবলিক রিলেশন অফিসার,
ডিপার্টমেন্ট অব বিসিপিআর, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি