কারামুক্ত বিডিআর সন্তানকে আর দেখা হবে না ১৬ বছর অপেক্ষায় থাকা বাবার

১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন রবিউল
১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন রবিউল

রবিউল ইসলাম। পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার আসামি। দীর্ঘ ১৬ বছর পর বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) কারামুক্তি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু জায়গা জমি বিক্রি করে যে বাবা দীর্ঘ ১৬ বছর ছেলের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি আর নেই।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় বৃহস্পতিবার কারামুক্তি পেয়েছেন ১৬৮ জন বিডিআর জওয়ান। রবিউল ইসলাম তাদেরই একজন।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে রবিউল। স্থানীয় হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে বিডিআরে যোগ দেন। সন্তানের সাফল্যে বাবা-মা সেদিন স্বস্তির হাসি হেসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। চাকরিতে যোগদানের মাত্র ২৬ দিনের মাথায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন রবিউল। 

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলার আসামি হন রবিউল। সেই মামলায় তার সাজা হয়। তবে তার বাবা আব্দুর রহমানের বিশ্বাস ছিল তার ছেলে নির্দোষ, সে একদিন মুক্তি পাবেই। জায়গা-জমি বিক্রি করে ছেলের মুক্তির জন্য চেষ্টা করেছেন  আব্দুর রহমান। এক সময় ছেলের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।  

অবশেষে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় ২৫০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। দীর্ঘ ১৬ বছর পর বৃহস্পতিবার  কারামুক্তি পেয়েছেন রবিউল। তাকে এক পলক দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন তার স্বজনরা। কিন্তু যে বাবা দীর্ঘ ১৬ বছর ছেলের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি আর নেই। গত ৩ মাস আগে মারা গেছেন রবিউলের বাবা। ছেলের জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করেও তাকে মুক্ত অবস্থায় দেখে যেতে পারলেন না আব্দুর রহমান।

গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। আওয়ামী সরকার পতনের কয়েকদিন পর সারাদেশে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক ও হত্যা মামলার নিরপরাধ বিডিআর জোয়ানদেন মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন তাদের স্বজনেরা। রবিউলের বাবাও ছেলের মুক্তির জন্য অসুস্থ শরীর নিয়েও রাস্তায় নামেন। আশায় বুক বেঁধেছেন। কিন্তু তার আশা পূরণ হলেও ছেলেকে আর দেখা হলো না।


পরিবারিকসূত্রে জানা গেছে, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়  প্রথমে একটি মামলায় ৭ বছর সাজাভোগ করে বের হন রবিউল। তার কিছুদিন পর বিস্ফোরক আইনের আরেকটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান আদালত। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর  বৃহস্পতিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে সাবেক এই বিডিআর জোয়ানের। তার বাড়ি ফেরার আনন্দে আত্মহারা পরিবার-আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকজন।

রবিউলের বড় ভাই শাহাজাহান আলী বলেন, ‘দীর্ঘ আইনি লড়ায়ের পর  বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আমার ভাই কারাবাস থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভাইকে কাছে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। চাকরি পাওয়ার পর বাবা-মা খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই সব খুশি ম্লান হয়ে যায়। উপার্জন করে রবিউল পরিবারে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছিল সেটার উলটো। রবিউল কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা খাওয়া খরচ দিতে হতো। কিছুদিন পর পর কাপড়-চোপড় দেওয়া, তার পিছনে খরচ করতে গিয়ে আমাদের প্রায় সব শেষ। আমার ভাইয়ের জীবনটা জেলেই কেটে গেল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার ভাইকে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহাল, একই সঙ্গে দীর্ঘদিন বিনা অপরাধে কারাগারে থাকা এবং তার পেছনে খরচ করতে গিয়ে  পরিবার যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

রবিউলের চাচা রেজাউল করিম বলেন, ‘ছেলের জন্য নানা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে রবিউলের বাবা আব্দুর রহমান গত অক্টোবর মাসে মারা গেছেন। রবিউলের মা সালেহা খাতুনও অসুস্থ, বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতো।’ 


সর্বশেষ সংবাদ