‘শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্রের’ কমিটি গঠন

ফেনীতে ‘শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্রের’ আত্মপ্রকাশ করে। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ফেনী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্রের’ উপদেষ্টা, আহ্বায়ক ও মুখপাত্র কমিটি ঘোষণা করা হয়। পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যকরী কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝিতে পলাশী যুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ত্রিপুরার বিশাল অংশ শাসন করেন বীর শমসের গাজী। এই বীরের জন্ম ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ায়। অজানা কারণে ব্রিটিশ বিরোধী এই বীরপুরুষকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে৷ উপমহাদেশীয় চরিত্র, ইতিহাসের বিস্মৃত এই মহানায়কের জীবন ও কর্মকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে আত্মপ্রকাশ হয় ‘শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্র’। এ ছাড়াও চর্চা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সাতটি দাবি পেশ করা হয়।

আরও বলা হয়, শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে সহসাই ফেনী ও ঢাকাতে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রচনা প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। ফেনীতে শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্র দিয়ে কাজ শুরু হলেও অদূর ভবিষ্যতে বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে ‘শমসের গাজী ফাউন্ডেশন’ গঠন করে এর কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্রের উপদেষ্টা পরিষদ ও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে উপদেষ্টামণ্ডলীরা হলেন, সাবেক এমপি ও শমসের গাজীর উত্তরসূরি ওয়াদুদ ভূইয়া, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রসেফর ড. মাইন উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দীন সবুজ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দূল্লাহ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নুর মোহাম্মদ আজমী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহিল মারুফ ফাহিমসহ প্রমুখ।

শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্রের কমিটির অন্যরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক কাজী মোস্তাক গাউছুল হককে আহ্বায়ক করা হয়। অন্যরা হলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক, ইকবালুল সাদিক ভূঞা, সাইদুল ইসলাম। সদস্য সচিব হলেন, মুহাম্মদ ফজলুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব আবিদুর রহমান, সৈকত ইকবাল, হাফিজ আহমেদ মিলন। শাহাদাত মাহমুদ সিদ্দিকীকে মুখপাত্র, সহ-মুখপাত্র কবি স্বাধীন মুর্শিদসহ ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, লেখক ও গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক, সহকারী অ্যাটর্নি জেরেল আব্দুল্লাহ আল মারুফ ফাহিম, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ : সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল, একেএম আব্দুর রহীম, সাবেক সভাপতি, ফেনী প্রেস ক্লাব, ফেনী রিডার্স ফোরামের মুখপাত্র কবি স্বাধীন মোর্শেদ, শহীদ নাজির আহমেদ স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব সৈকত ইকবাল, ফারহানা ইয়াসমিন, ছালেহা রিপা ও ফেনীতে কর্মরত সংবাদ কর্মীরা। 

শমসের গাজী চর্চা কেন্দ্রের দাবিগুলো হলো-  

১. শমসের গাজীর জীবন ও কর্মকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চর্চার জন্য বাংলা একাডেমি ও কুমিল্লা বার্ড’র আদলে ফেনীতে সরকারিভাবে ‘শমসের গাজী একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনকে আশু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

২. উপমহাদেশীয় বীর, বাংলার সানি নবাব, ভাটির বাঘ শমসের গাজীর জীবনী ও কর্ম পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৩. ইতিহাসচর্চার অংশ হিসেবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শমসের গাজী চেয়ার এবং তার নামে বৃত্তি চালু করতে হবে। 

৪. অন্যান্য জাতীয় বীরদের মতো শমসের গাজীর নামে ফেনীসহ সারা দেশে নির্মিত এবং নির্মিতব্য বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালসমূহে হলের নামকরণ করতে হবে। বিশেষ করে ফেনীর মহিপালে শমসের গাজী স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন ও ফেনী ছাগলনাইয়া সড়কের নাম শমসের গাজীর নামে করার জোর দাবি জানানো হয়।  

৫. ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম ও সিলেটে শমসের গাজীর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহকে সরকারি উদ্যোগে যথাযথ সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। 

৬. শমসের গাজীর জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র, নাটক, উপন্যাস, ইতিহাসগ্রন্থ তৈরিতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৭. ২০২৫ সালকে ‘শমসের গাজী বর্ষ’ ঘোষণা করে ফেনী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বছরব্যাপী কর্মসূচি দিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ