গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের ঈদ ভাবনা

গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা
গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর, যা সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য এক অনাবিল আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। তবে ঈদের আনন্দ যেন কেবল একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়—এমনটাই প্রত্যাশা করেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) ছাত্রনেতারা।

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা ঈদ উপলক্ষে তাদের ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা কেবল ব্যক্তি জীবনের আনন্দই নয়, বরং সমাজের অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম ঈদ উদযাপন করতে যাওয়া নতুন বাংলাদেশে কীভাবে তাঁরা ঈদকে দেখছেন, কী প্রত্যাশা তাদের— এসব নিয়েই তাদের ভাবনা উঠে এসেছে আজকের এই আয়োজনে-

সমাজের সবার মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয়

এবারের ঈদকে নতুন এক বাংলাদেশের প্রথম ঈদ হিসেবে দেখছেন। গণঅভ্যুত্থানের সময় সাধারণ মানুষের কষ্টের জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা তাকে এক নতুন উপলব্ধি দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও আমার চেয়েও অনেক বেশি কষ্টে আছে বহু মানুষ। এবারের ঈদে তাই তাদের মুখে হাসি ফোটানোই আমার মূল লক্ষ্য।

তিনি জানান, এবার তিনি কিছু পরিবার, পথশিশু ও এতিমখানার শিশুদের জন্য ঈদের উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি আশা করেন, ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমানভাবে ছড়িয়ে যাবে এবং নতুন বাংলাদেশে আর কোনো শ্রেণী বৈষম্য থাকবে না।

[মোহাম্মাদ আলী ত্বোহা, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ] 

সংহতি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের বার্তা নিয়ে ঈদ

ঈদকে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবে দেখেন না। বরং তিনি চান, এটি পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, সংহতি ও সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে উঠুক। তিনি বলেন, ঈদ মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ আনন্দ আয়োজন। তবে, এই আনন্দ শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়, বরং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য। তিনি চান, রোজার মাসে পাওয়া ত্যাগ ও সংযমের শিক্ষা যেন ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হয় এবং সবাই মিলে দেশের উন্নয়নে কাজ করে।

[দূর্জয় শুভ, প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গোবিপ্রবি শাখা] 

ভালোবাসা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি

ঈদকে ভালোবাসা ও আনন্দ ভাগাভাগির দিন হিসেবে দেখেন। তাঁর কাছে ঈদের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত হলো পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এবং ছোটদের ঈদি দেওয়া। তিনি বলেন, আমার ঈদের দিন শুরু হবে ফজরের নামাজ দিয়ে। এরপর নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করব এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ ভাগ করব। তবে শুধু নিজের জন্য নয়, ঈদের আনন্দ অসহায়, বয়স্ক এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গেও ভাগাভাগি করতে চান তিনি। কারণ তাঁর বিশ্বাস, ঈদের প্রকৃত আনন্দ তখনই পাওয়া যাবে, যখন সবার মুখে হাসি ফুটবে।

[বেলাল হোসাইন আরিয়ান, আহ্বায়ক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গোবিপ্রবি শাখা]

সকল মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান

এবারের ঈদকে অন্যরকম আনন্দের উপলক্ষ হিসেবে দেখছেন। তার মতে, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান এবং গণঅভ্যুত্থানের সফলতা এবারের ঈদকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। তিনি বলেন, ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে এবার ঈদ উদযাপন করছি। এটি নিঃসন্দেহে বিশেষ আনন্দের মুহূর্ত। তবে এই আনন্দের মাঝেও তিনি স্মরণ করেন আন্দোলনে শহীদ ও পঙ্গু হয়ে যাওয়া সহযোদ্ধাদের। তাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদ আমাদের শিক্ষা দেয় আনন্দ ভাগাভাগি করার। তাই আমরা যেন সমাজের অসহায়, নিপীড়িত, নিগৃহীত সকল মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিই। তবেই তো ঈদ পূর্ণতা পাবে।

[মো: শুয়াইব উদ্দিন আল আজাদ, কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও মুখ্য সংগঠক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গোবিপ্রবি]

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা ও নিরাপদ যাত্রার কামনা ছাত্রনেতাদের 

প্রত্যেক ঈদেই লাখো মানুষ প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি ফেরে। এ সময় সড়কে প্রচুর ভিড় হয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে। ছাত্রনেতারা আশা করছেন, ঈদ হবে ভ্রাতৃত্বের এক উৎসব, যেখানে মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করবে। ঈদ মানেই কেবল নতুন পোশাক বা সুস্বাদু খাবার নয়; বরং এটি মানবিকতা, সহমর্মিতা ও একতা গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ঈদ মোবারক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ