নিকলির হাওর কেন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের জায়গা?
- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭ AM , আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭ AM

ঈদের ছুটিতে রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল। সবুজে মোড়া বোরো ধানের মাঠ আর প্রকৃতির অনন্য রূপ উপভোগ করতে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। বিশেষ করে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ককে ঘিরেই গড়ে উঠেছে ঈদ উৎসবের নতুন কেন্দ্র।
বছরের বর্ষা মৌসুমে হাওর থাকে পানিতে পরিপূর্ণ, তখন নৌকাভ্রমণই ছিল প্রধান আকর্ষণ। তবে এবার ভিন্ন দৃশ্য। শুষ্ক মৌসুমে পানির বদলে বিস্তৃত সবুজ ধানের গালিচায় ঢাকা হাওরের বুক, আর এই সৌন্দর্যের মাঝে দীর্ঘ অলওয়েদার সড়ক যেন হয়ে উঠেছে ‘প্রকৃতির ক্যারাভ্যান’। ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়ক ধরে স্রেফ ঘুরেই যেন ভুলে থাকা যায় শহরের কোলাহল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিকলী, বালিখলা, মিঠামইনের জিরোপয়েন্টসহ সড়কসংলগ্ন এলাকাগুলোতে ঈদের আমেজ যেন আরও রঙিন হয়ে উঠেছে। স্থানীয় ও ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলা বসেছে হাওরের পাশে। কেউ ঘোড়ায় চড়ে, কেউ বাইকে, আবার কেউ দল বেঁধে পিকআপ বা মাইক্রোবাসে গান-বাজনা আর নাচে মেতে উঠছেন। তরুণ-তরুণীরা সেলফি ও টিকটকের ব্যস্ততায় নিজেদের আনন্দময় মুহূর্তগুলো ধরে রাখছেন।
ঢাকা থেকে পরিবারসহ ঘুরতে আসা পর্যটক চৈতি খন্দকার বলেন, “শুধু বর্ষাকালের হাওরের গল্প শুনেছি। এবার এসে দেখলাম, শুকনো মৌসুমেও কিশোরগঞ্জের হাওরের সৌন্দর্য অপরূপ। ইটনা-মিঠামইনের সড়ক ধরে চারপাশে যতদূর চোখ যায়, শুধু সবুজ আর প্রকৃতির মায়া।”
ফটোগ্রাফাররাও এ সময়টিকে কাজে লাগাচ্ছেন। অনেকেই পেশাদার ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পর্যটকদের ছবি তুলে তাৎক্ষণিক প্রিন্ট দিয়ে আয়ের সুযোগ নিচ্ছেন। শিশুরা ঘোড়ার পিঠে মেতে আছে, আবার অনেকে ছোট নৌকায় হাওরের প্রান্ত ছুঁয়ে দেখতে বেরিয়ে পড়ছেন।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা হাওর অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে এ সময়ে। নদীপথে স্পিডবোট কিংবা নৌকা নিয়ে ঘুরছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ সাবমার্চেবল সড়ক ধরে যানবাহনে চড়ে মিঠামইন জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত যাচ্ছেন, যেখানে অপেক্ষা করছে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যপট।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাধারণত বৈশাখ থেকে কার্তিক পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে পানি থরে ভরপুর থাকে। তখন পর্যটনের মূল আকর্ষণ হয় নৌকাভ্রমণ। তবে এবারের ব্যতিক্রম—শুষ্ক মৌসুমেও হাওরের সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করেছে।
তবে আনন্দের মাঝেও রয়েছে কিছু উদ্বেগ। স্থানীয়রা বলছেন, তরুণদের বেপরোয়া বাইক চালনা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। যদিও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো থাকায় কোনো বড় ধরনের সমস্যা দেখা যায়নি।
কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের সৌন্দর্য যে এখন সারাবছরই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম, সেটি এবার প্রমাণিত। স্থানীয় পর্যটনশিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন ভ্রমণবান্ধব পরিবেশ। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে সঠিক ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলেই এই অঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনা আরও বিকশিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।