বইমেলায় আবু সাঈদের আইকনিক অঙ্গভঙ্গির ফটোবুথ: ইনকিলাব মঞ্চের ব্যতিক্রমী আয়োজন
- তাওসিফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৪ PM , আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৩ AM

প্রসারিত বাহু, প্রশস্ত বুক—মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় বরণ করা এক সাহসী তরুণের প্রতিচ্ছবি। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ এই ভঙ্গিতেই বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে ওঠেন। সেই আইকনিক মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে এবারের অমর একুশে বইমেলায় এক অভিনব আয়োজন করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের ১০৬২ ও ১০৬৩ নম্বর স্টলে স্থাপন করা হয়েছে আবু সাঈদের অঙ্গভঙ্গির আদলে একটি ফটোবুথ। এর সাথে শিশুরা, কিশোর-তরুণরা ছবি তুলে নিজেরাই হয়ে উঠছেন আবু সাঈদ। এতে তারা শুধু একটি ছবি তোলার অভিজ্ঞতাই পাচ্ছেন না, বরং আন্দোলনের চেতনাকে আত্মস্থ করার অনুভূতিও লাভ করছেন। প্রিয়জনরা ক্যামেরাবন্দি করছেন সেই প্রতীকী মুহূর্ত, যেন ভবিষ্যতের জন্য একটি স্মারক হয়ে থাকে।
ফটোবুথ ছাড়াও ইনকিলাব মঞ্চের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে আন্দোলনের নানা স্মারক। এর মধ্যে অন্যতম ‘পানি লাগবে পানি?’ লেখা কাঁচের গ্লাস, যা শহীদ মীর মুগ্ধের স্মরণে তৈরি করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের মাঝে পানি বিতরণ করতে করতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া মীর মুগ্ধের এই লাইন আন্দোলনের এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা আজও মনে রেখেছে সবাই।
এ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে আন্দোলনের বার্তা বহনকারী কাঠের গয়না, যেখানে লেখা আছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন,’ ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ,’ ‘নতুন বাংলাদেশ,’ ‘মুজিব মুর্দাবাদ,’ ‘দড়ি ধইরা মারছি রে টান,’ ‘ডাইনি হইবে খান খান,’ ‘শেষ হয়নি যুদ্ধ,’ ‘বাংলা ব্লকেড,’ ‘৩২-এর পতন’ এবং ‘মুজিব থেকে হাসিনা, ফ্যাসিবাদ মানিনা।’ এসব স্মারক সংগ্রামের ইতিহাস ও দর্শনকে প্রতিফলিত করে, যা সংগ্রামী জনতার মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করছে।
দর্শকদের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বড় বড় স্টিকার, যেখানে হাসিনার ছবি ব্যবহার করে লেখা হয়েছে—‘লাখো মাইনষের রক্ত খাইয়া হাসে কিলার কুইন, পিছের দুয়ার ভাইঙ্গা পালায় লক্ষণ সেনের বুইন।’ নিচে লেখা রয়েছে ‘ডাইনি বিন’। স্টলে উপস্থিত ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা দর্শকদের উৎসাহিত করছেন এই স্টিকার নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ডাস্টবিনে লাগানোর জন্য, যেন তা এক ধরনের প্রতীকী প্রতিবাদ হয়ে ওঠে।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করতে স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বিশেষ একটি কলম। সাদা মোড়কের এই কলমে সবুজ কালি দিয়ে লেখা—‘নতুন বাংলাদেশে স্বাগতম।’ প্রতিটি কলমের মূল্য ধরা হয়েছে ২৫ টাকা, যা সংগ্রামের বার্তা বহন করবে প্রতিটি মানুষের হাতে হাতে।
এই ব্যতিক্রমী আয়োজন সম্পর্কে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা চাই, আন্দোলনের ইতিহাস শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকুক। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম আন্দোলনের চেতনা ধারণ করুক, তার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠুক। ফটোবুথ, স্মারক ও অন্যান্য প্রতীকী উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা সেই চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
ফটোবুথের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ বলছেন, এটি কেবল একটি ছবি তোলার স্থান নয়, বরং এক ধরনের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
মিরপুর থেকে আসা কলেজ ছাত্র নিজাম উদ্দীন বলেন, ‘আমরা এখানে শুধু ছবি তুলতে আসিনি। আমরা এসেছি আবু সাঈদের আত্মত্যাগকে মনে রাখার জন্য, তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য।’