কেএফসি, কোকাকোলা, ম্যাগি, লাক্স, ক্লোজ আপ—এসব পণ্যসামগ্রী কি ইসরায়েলের?

‘ইসরায়েলি পণ্য’ বলে প্রচার করা হয়ে থাকে যেসব বহুজাতিক পণ্য
‘ইসরায়েলি পণ্য’ বলে প্রচার করা হয়ে থাকে যেসব বহুজাতিক পণ্য

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এ বিক্ষোভকে কেন্দ্রে করে সোমবার (৭ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাটা, কেএফসিসহ বিভিন্ন দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন দোকান ও চেইন সুপারশপগুলোতে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বিক্রি না করা এবং না রাখতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

যদিও ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বর্জনের ডাক বাংলাদেশে নতুন নয়। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব পণ্য বর্জনকে সমর্থন করে বিভিন্ন বিকল্প পণ্যের তালিকাও প্রচার করা হয়ে আসছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে এসব পণ্য বর্জন করতে বক্তব্য, স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়। যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, প্রসাধনী, পোশাক এবং জুতার ব্র্যান্ড, রেস্তোরাঁর চেইন, ক্যাফে এবং সুপারমার্কেট ইত্যাদি।

‘‘বিদেশের যত পণ্য আছে আমি ইচ্ছা করে ফেসবুকে চাইলে চালিয়ে দিলাম এসব ‘ইসরায়েলি পণ্য’। উদাহরণস্বরূপ- কেউ যদি ফেসবুকে বলে এপেক্স ‘ইজরায়েলি পণ্য’ দেখবেন যে ৯০ জন তার কথায় বিশ্বাস করবে এবং সেটার পেছনে ছুটতে থাকবে। 'হুজুকে বাঙালি' বলে একটা কথা আছে, তাই কেউ একজন পণ্য বর্জনের ডাক দিলে বাছবিচার না করে বাকিরাও তাতে সায় দেন। এভাবে মূলত এসব পণ্যের বয়কটের শুরু। তাছাড়া বাজারে সমমান পণ্যের অনেকগুলো কম্পিটিটর (একাধিক কোম্পানি) আছে। তারাও এটাকে প্রচারণার অংশ হিসেবে নিয়ে সমমনা আরেকটি পণ্যকে বাজার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পণ্যের বয়কটে অংশ নেয়। এটিও বাজার প্রতিযোগিতার একটি অংশ—শিক্ষক, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ঢাবি

সোমবার দোকান-রেস্তোরাঁ ভাঙচুর ও জনরোষের শিকার হওয়া এই প্রথম দেখা গেছে। যদিও বাটা, কেএফসি, কোকাকোলা বা পেপসি কোনোটাই ইসরায়েলি কোম্পানি তো নয়ই, মালিকানা সূত্রেও ইসরায়েল রাষ্ট্র বা ইহুদিদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি  তথ্য যাচাইকারী বিভিন্ন ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠানও যাচাই-বাচাই করে একই তথ্য দিচ্ছে।

এদিকে, বাটা কোম্পানি এরই মধ্যে তাদের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সোমবার রাতে ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বাটা কোনো ইসরায়েলি মালিকানাধীন কোম্পানি নয় এবং চলমান ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের সঙ্গে তাদের কোনো রাজনৈতিক সংযোগ নেই। তারা আরও জানায়, বাটা বিশ্বব্যাপী একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান, যার মূল সূচনা হয়েছিল চেক রিপাবলিকে। আমাদের কোনো রাজনৈতিক সংঘাতের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

সংশ্লিষ্টদের মতে, উন্নত বিশ্বেও এ ধরনের পণ্য বর্জনের রীতি রয়েছে। সেটাকে অর্থনৈতিক যুদ্ধ বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ভাঙচুর করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো নজির নেই অন্য কোনো দেশে।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাটা, কেএফসিসহ বিভিন্ন দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনা ঘটেছে

তাছাড়া বাজারে সমমান পণ্যের অনেকগুলো কম্পিটিটর (একাধিক কোম্পানি) আছে। তারাও এটাকে প্রচারণার অংশ হিসেবে নিয়ে সমমনা আরেকটি পণ্যকে বাজার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পণ্যের বয়কটে অংশ নেয়। এটিও বাজার প্রতিযোগিতার অংশ।

সারাদেশে চলমান ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বর্জন ইস্যু নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তবে তারা এই ইস্যু নিয়ে কথা বললেও দেশের চলমান পরিস্থিতির মধ্যে নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।

বিভাগটির একজন শিক্ষক বলেন, সোমবার যে বিভিন্ন দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে জড়িতরা আসলেই চোর-ডাকাত। ধর্মীয় কিংবা আবেগের জায়গা থেকে এটা ঘটেনি। দেখবেন যে, ওরা পণ্যগুলো লুটপাট করে বিক্রি করে দিয়েছে।

‘ইসরায়েলি পণ্য’ বর্জনের ডাক বাংলাদেশে নতুন নয়। বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব পণ্য বর্জনকে সমর্থন করে বিভিন্ন বিকল্প পণ্যের তালিকাও প্রচার করা হয়ে আসছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে এসব পণ্য বর্জন করতে বক্তব্য, স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়। যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, প্রসাধনী, পোশাক এবং জুতার ব্র্যান্ড, রেস্তোরাঁর চেইন, ক্যাফে এবং সুপারমার্কেট ইত্যাদি।

‘‘বিষয়টি এমন যে আমার উদ্দেশ্যে চুরি করা, তবে সেখানে মানুষের আবেগটিকে কাজে লাগিয়ে আমি শুধু বলবো, এটি ‘ইসরায়েলি পণ্য’ ভাঙচুর করতে হবে। আমরা তো হুজুগে বাঙালি—একজন যদি বলে ভাঙতে হবে। তার পেছন পেছন আরও শত শত মানুষ গিয়ে ভাঙচুর করেছি।’’

তিনি বলেন, বাটা যদি ‘ইসরায়েলি পণ্য’ হয়েও থাকে তাহলে আপনি ব্যবহার করবেন না। কেএফসিও যদি সেরকম হয়ে থাকে তাহলে সেখানে গিয়ে খাবো না। তাই বলে কি ভাঙচুর করতে পারি?

‘‘ভাঙচুর করা মানে তো আমরা ইসরায়েলের কাজটা করছি। তারা গাজায় মানুষ মারছে, এখন ওদের আমরা সরাসরি মারতে পারছি না। এখন জিনিসপত্র ভাঙচুর করছি। বিষয়টি একই হয়ে যায়। উন্নত বিশ্বে ম্যাকডোনাল্ডস-কেএফসি বর্জন করছে। স্টারবাকস এমনভাবে বয়কট করছে তাদের ব্যবসাও বন্ধ করতে হয়েছে। সেটাকে অর্থনৈতিক যুদ্ধ বলা যায়, বাংলাদেশেও আপনি সেটা করতে পারেন। আপনি তো ভাঙচুর করতে পারে না। কিন্তু এমনভাবে বয়কট করতে যাবেন, যাতে তারা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। আইন তো নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না।’’

কেএফসি, কোক বা পেপসি কোনোটাই ইহুদি কোম্পানি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশের যত পণ্য আছে আমি ইচ্ছা করে ফেসবুকে চাইলে চালিয়ে দিলাম এসব ‘ইসরায়েলি পণ্য’। উদাহরণস্বরূপ- কেউ যদি ফেসবুকে বলে এপেক্স ‘ইজরায়েলি পণ্য’ দেখবেন যে ৯০ জন তার কথায় বিশ্বাস করবে এবং সেটার পেছনে ছুটতে থাকবে। 'হুজুকে বাঙালি' বলে একটা কথা আছে, তাই কেউ একজন পণ্য বর্জনের ডাক দিলে বাছবিচার না করে বাকিরাও তাতে সায় দেন। এভাবে মূলত এসব পণ্যের বয়কটের শুরু। তাছাড়া বাজারে সমমান পণ্যের অনেকগুলো কম্পিটিটর (একাধিক কোম্পানি) আছে। তারাও এটাকে প্রচারণার অংশ হিসেবে নিয়ে সমমনা আরেকটি পণ্যকে বাজার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পণ্যের বয়কটে অংশ নেয়। এটিও বাজার প্রতিযোগিতার একটি অংশ।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ

বিভাগটির আরেকজন শিক্ষক বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সারাবিশ্বে ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। অর্থাৎ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে বাংলাদেশের কেউ তাদের লোগোটা অনুমোদন নিয়ে ব্যবহার করে। পাশাপাশি তারা কিছু কম্পোনেন্টও পাঠায়, সেগুলো ব্যবহার করে দেশের ব্যবসা করে তারা। তবে মালিক থেকে শুরু করে সবকিছুই বাংলাদেশি। এর বিনিময়ে তারা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কিছু রয়েলিটি দেয়। কিন্তু মালিকানা, লভ্যাংশ থেকে শুরু করে সবকিছু দেশে থেকে যায়। এমনকি সর্বোচ্চ লভ্যাংশটা দেশেই থেকে যায়।

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বর্জনের ডাক বাংলাদেশে অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। যদিও সেটার একাডেমিকভাবে কোনো পড়াশোনা কিংবা গবেষণা নেই। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে  সচেতনতার জন্য কোনটা কোন দেশের পণ্য তা শনাক্তে একাডেমিকভাবে কাজ করা যেতে পারে।

‘‘তবে এখানেও একটি সমস্যা আছে। আমি ইন্টারনেট ঘেটে কিংবা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ১০টি ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বের করলাম। তখন তো আমি তার্গেট করে এই ১০টি পণ্য যে ইসরায়েলি সেটাতো মানুষকে বলে দিলাম। তারা আবার এসব কিনবে না, বর্জন করবে। এটাও একাট সমস্যা। একাডেমিক দিক থেকে আমি ওই ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে নেগেটিভ প্রচারণা করছি, বিষয়টি এমন। এটা আমার ব্যক্তিগত মত।’’

পণ্য বর্জনের ডাকে কোম্পানিগুলোর কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একে কোম্পানিগুলোর অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এর আগে কোকাকোলাকে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বলার পর তাদেরকে আবার বিজ্ঞাপন করতে হয়েছে নতুন করে। এটা যে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ না সেজন্য এই বিজ্ঞাপন। শুধু তাই নয়, কোম্পানিটির নেগেটিভ প্রচারণার জন্য কোক স্টুডিও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। নেগেটিভ প্রচারণটা খুবই খারাপ। এখন বাটা নিয়ে এরকম নেগেটিভ প্রচারণা হচ্ছে।

‘ইসরায়েলি পণ্য’ বর্জনে বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতেও দেখা যায়

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি পণ্য’ বলে প্রচারণা হওয়া যে পণ্যগুলো একটাও যে তাদের না সেটাও যেমন সত্য, আবার সবগুলো যে তাদের সেটাও সত্য না। একটা জিনিস খেয়াল করবেন যে, ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা এসব গুজব ছড়াচ্ছি, সেই ফেসবুকের মালিক মার্ক জাকারবার্গও কিন্তু একজন ইহুদি। ফেসবুক তো বেশি দিন হয়নি এসেছে। আজ থেকে ১৫-২০ কিংবা ৫০ বছর পরে গিয়েও হয়তো আমরা বলবো, ফেসবুকও ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান। কোনো কোম্পানির ওনার থাকতে পারে কিন্তু লং টাইম একটি কোম্পানি চললে একটা সময় সেটা আর একটা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সেটি দেখা যায় বিভিন্ন দেশের হয়ে যায়, মালিকানা চেঞ্চ হতে হতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোস্তাক গাউসুল হক ফেসবুকে একাধিক পণ্যের মালিকানা তুলে ধরে ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেন, ইহুদি কোম্পানি হিসেবে ভাঙচুর ও জনরোষের শিকার হওয়া বাটা, কেএফসি, কোক বা পেপসি কোনোটাই ইহুদি কোম্পানিতো নয়ই, মালিকানাসূত্রেও ইসরায়েল রাষ্ট্র বা ইহুদিদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। অবশ্যই, ইহুদি (ইসরায়েলি নয়) মালিকানাধীন বিখ্যাত কোম্পানির মধ্যে আছে ফেসবুক (প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের মা-বাবা দুজনেই ইহুদি), গুগল (সহ-প্রতিষ্ঠাতা সার্গি ব্রিনের মা-বাবা ইহুদি, ল্যারি পেইজের মা ইহুদি), ওরাকল (প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন ইহুদি) এবং ডেল (প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেল ইহুদি)। আর হ্যাঁ, অ্যাপলের বর্তমান চেয়ারম্যান আর্থার লেভিনসনও ইহুদি। তাহলে বয়কট যদি করতেই হয়, আমাদের উচিত ফেসবুক, গুগল, ওরাকল ব্যবহার না করা এবং ডেল-এর কম্পিউটার ও অ্যাপলের মোবাইল না কেনা। সবাই মিলে এটাই কেন করি না আমরা?

‘ইসরায়েলি পণ্য’ বলে প্রচার করা কোম্পানিগুলোর যে পরিচয় পাওয়া গেছে
‘ইসরায়েলি পণ্য’ বলে প্রচার করা কোম্পানিগুলোর পরিচয় নিয়ে ২০২৩ সালে ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ তাদের একটি অনুসন্ধান করেছে। ফেসবুকে প্রচার হওয়া একাধিক পণ্য ধরে ধরে অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে-

১) জুতা: বাটা
বাটার ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৮৯৪ সালে চেক প্রজাতন্ত্রে বাটার প্রথম কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি একটি বহুজাতিক কোম্পানি এবং এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

২) শ্যাম্পু: ক্লিয়ার/সানসিল্ক/ডোব
শ্যাম্পুর এই ৩টা ব্র্যান্ডেরই প্রস্তুতকারক ইউনিলিভার। এটি একটি বহুজাতিক কোম্পানি এবং এর সদর দপ্তর ইংল্যান্ডের লন্ডনে অবস্থিত। ১৯২৯ সালে ইংল্যান্ডের কোম্পানি লিভার ব্রাদার্স ও নেদারল্যান্ডের কোম্পানি মার্গারিন ইউনি একীভূত হয়ে এই ইউনিলিভার গঠিত হয়েছিল।

৩) ওয়াশিং পাউডার: সার্ফ এক্সেল/হুইল/রিন
এই ৩টিই ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড।

৪) ক্রিম/বডি লোশন: ভেসলিন/ডোব/পন্ডস/ফেয়ার এন্ড লাভলী
এই ৪টিই ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড।

৫) বেবি লোশন: জনসন এন্ড জনসন
এটি আমেরিকান প্রতিষ্ঠান। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার নিউজার্সিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং এখনো নিউ জার্সিতেই জনসন এন্ড জনসন এর সদর দপ্তর রয়েছে।

৬) নুডলস: ম্যাগি
এই নামে কোনো নুডলস এর ব্র্যান্ড পাওয়া যায়নি। তবে কাছাকাছি বানানে Maggi নামে একটি জনপ্রিয় নুডলস এর ব্র্যান্ড রয়েছে। ১৮৮৪ সালে জুলিয়াস ম্যাগি নামের একজন উদ্যোক্তা সুইজারল্যান্ডে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে ম্যাগিকে নেসলে নামক আরেকটি সুজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি কিনে নেয়।

৭) কোমল পানীয়: কোকাকোলা/পেপসি/স্প্রাইট/ফান্টা/সেভেন আপ/এ্যাটম/এ্যাকুয়াফিনা
১৮৯২ সালে আমেরিকায় দ্যা কোকাকোলা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কোম্পানি থেকেই কোকাকোলা, স্প্রাইট ও ফান্টা ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় বাজারজাত করা হয়। অন্যদিকে ১৮৯৩ সালে আমেরিকায় পেপসিকো কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়, যে কোম্পানির কয়েকটি পণ্য হল পেপসি, সেভেন আপ, এ্যাটম, এ্যাকুয়াফিনা ইত্যাদি।

৮) টয়লেট্রিজ: ল’অরিয়েল/বস/গার্নিয়ার
ল’অরিয়েল ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ফরাসি কোম্পানি। ফ্রান্সের প্যারিসে এর সদর দফতর অবস্থিত। ল’ অরিয়েল এবং গার্নিয়ার এই কোম্পানির পণ্য। বস এর প্রতিষ্ঠাতার নাম হিউগো বস। ১৯২৪ সালে জার্মানিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানেও এর সদরদপ্তর জার্মানিতে অবস্থিত।

৯) চা: তাজা
ইংল্যান্ডের আর্থার ব্রুক ১৮৪৫ সালে ইংল্যান্ডে Brooke Bond & Company প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ব্রক বন্ডেরই একটি ব্র্যান্ড হল তাজা চা। পরবর্তী সময়ে ব্রুক বন্ড  Lipton Teas and Infusions এবং ইউনিলিভার এর সাথে একীভূত হয়ে যায়।

১০) সাবান: লাক্স/ডোব/লাইফবয়
এই ৩টি পণ্যই ইউনিলিভারের।

১১) বডি স্প্রে: এক্স
এটি ইউনিলিভারের পণ্য। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম ফ্রান্সে এই ব্র্যান্ড এর বডি স্প্রে বাজারে ছাড়া হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশেও এই ব্রান্ডের পণ্য বাজারজাত করা হয়।

১২) এন্টি পারসপিরেন্ট: রেক্সোনা
রেক্সোনা’র উৎপাদক কোম্পানির নাম ছিল Sheldon Drug Company. ১৯০৮ সালে এটা অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে এটি ইউনিলিভার এর সাথে একীভূত হয়ে যায়।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ইস্ট ওয়েস্টে বিক্ষোভ

১৩) পাউডার: পন্ডস
আমেরিকান ফার্মাসিস্ট Theron T. Pond ১৮৪৬ সালে আমেরিকায় T. T. Pond Company প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির প্রসাধনী পণ্যসমূহ পন্ডস নামে বাজারজাত করা হয়। ১৯৫৫ সালে এটি আরেকটি আমেরিকান কোম্পানি  Chesebrough Manufacturing Company এর সাথে একীভূত হয়ে যায়, এবং ১৯৮৭ সালে ইউনিলিভার এর সাথে একীভূত হয়ে যায়।

১৪) টুথপেস্ট: পেপসোডেন্ট/ক্লোজ আপ
১৯১৫ সালে আমেরিকায় পেপসোডেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪২ সালে এটি ইউনিলিভার কিনে নেয়। আর ক্লোজ আপের মূল কোম্পানিই ইউনিলিভার। ১৯৬৭ সালে তারা এই ব্রান্ডের টুথপেস্ট বাজারে ছাড়ে।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ১৪টি ক্যাটাগরির ৩২টা পণ্যের কোনোটার সাথেই ইসরায়েলের দৃশ্যমান কোনো সম্পর্ক নেই, যার আলোকে এদেরকে ইসরায়েলি পণ্য বলা যাবে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই ফেসবুকে দাবি করা পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।

দোকানে দোকানে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ না রাখার অনুরোধ 

এ ধরনের পণ্যের তালিকা তৈরি করে ‘ইসরায়েলি পণ্য’ হিসেবে দাবি করার ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টক্রিসেন্ডো বাংলাদেশ-এর ২০২১ সালের এই প্রতিবেদনে এ ধরনের ৫টি পণ্যের একটি তালিকা যাচাই করে প্রমাণ করা হয়েছিল যে এগুলো ‘ইসরায়েলি পণ্য’ নয়। নিচে প্রতিটি পণ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং উৎপত্তিস্থল দেওয়া হল। 

অ্যাক্যাফিনা: এই পানীয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারি এটি পেপসিকো কোম্পানির দ্রব্য। পেপসিকো হল একটি আন্তর্জাতিক আমেরিকান সংস্থা যারা বিভিন্ন রকম ফাস্টফুড এবং ঠান্ডা পানীয় প্রস্তুত করে। 

স্প্রাইট ও কোকাকোলা: কোকাকোলা কোম্পানি হল এই দুই পানীয়র প্রস্তুতকারক। এটি একটি জার্মান সংস্থা। পেপসিকোর মতই এটিও বিখ্যাত একটি আন্তর্জাতিক খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি।

পেপসি ও মাউন্টেন ডিউ: এই দুই বিখ্যাত ঠান্ডা পানীয়র উৎপত্তিস্থল হল আমেরিকা এবং এদের প্রস্তুতকারক হল পেপসিকো। 

সেভেন আপ: ডক্টর পেপার নামে একটি আমেরিকান কোম্পানি হল সেভেন আপের প্রস্তুতকারক।  

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ‘তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপর্যুক্ত দাবিটি ভুল। ভাইরাল ছবির একটিও ইজরায়েলের পণ্য নয়।’


সর্বশেষ সংবাদ