বইয়ের অভাব পূরণে দুই শিক্ষার্থীর অভিনব উদ্যোগ
ফেনী সরকারি কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ইয়াসিন আমিন ও আসাদুজ্জামান আরমান। চাকরির পিছনে ঘুরে সময় নষ্ট না করে নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এক ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। ‘অক্ষর অরণ্য’ নামের এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বইপ্রেমীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
তরুণ এই উদ্যোক্তারা নিজেদের গল্প তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে।
ইয়াসিন আমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শৈশব থেকেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহ থেকেই বই সংগ্রহের নেশা শুরু। তবে ফেনীতে নন-অ্যাকাডেমিক বইয়ের তেমন কোনো দোকান না থাকায়, এই ধরনের বই অনলাইনে কিনতে হত। এটি ছিল ঝামেলাপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। আমার ইচ্ছা ছিল ফেনীতে একটি নন-অ্যাকাডেমিক বইয়ের দোকান গড়ে তোলা। অবশেষে, বন্ধু আসাদুজ্জামান আরমানের সহযোগিতায় উদ্যোগটি হাতে নিই।
তিনি বলেন, 'আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ফেনীতে নন-অ্যাকাডেমিক বইয়ের অভাব পূরণ করা এবং বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে উদ্যোগের পরিকল্পনা শুরু করি। নিজেদের সঞ্চয় এবং এক বড় ভাইয়ের আর্থিক সহায়তায় প্রথমে ২০ হাজার টাকার বই সংগ্রহ করি। ঢাকার বাংলাবাজার থেকে বই সংগ্রহ শেষে 'অক্ষর অরণ্য' নামে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ভ্রাম্যমাণ কার্যক্রমের জন্য ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠকে বেছে নেই। মাঝে মাঝে আমরা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই প্রদর্শনীরও আয়োজন করি।'
তিনি আরও বলেন, 'শুরু থেকেই আমাদের উদ্যোগটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। প্রতিদিন শতাধিক মানুষ ভ্রাম্যমাণ স্টলে এসে বই দেখেন, কিনেন, এবং আনন্দের সাথে ছবি তোলেন। তাদের এই আগ্রহ আমাদের অনুপ্রাণিত করছে উদ্যোগটি আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতে। শুধু ভ্রাম্যমাণ কার্যক্রম নয়, ফেনী শহরে একটি স্থায়ী আউটলেট গড়ার পরিকল্পনা করছি। আউটলেটটিতে শুধু বই কেনার জায়গা নয়, বরং একটি নান্দনিক পরিবেশে পাঠকদের বই পড়ার সুযোগ দিব।'
অপর শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আরমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, 'আমরা চাই মানুষ বইয়ের প্রতি আবার আগ্রহী হোক। প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ ধীরে ধীরে বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু বই বিক্রি নয় বরং একটি পাঠাভ্যাস তৈরি করা। ফেনী শহরে নন-অ্যাকাডেমিক বইয়ের দোকানের অভাব আমাদের এই উদ্যোগ নিতে অনুপ্রাণিত করেছে। আমাদের উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা পাঠকদের একটি সুন্দর কালচার উপহার দিতে চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা একটি স্থায়ী বইয়ের আউটলেট তৈরি করা। এই আউটলেটটি এমনভাবে সাজানো হবে, যেখানে পাঠকরা বই কিনতে আসার পাশাপাশি বই পড়ার জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশও পাবেন।'
দুই শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকার বইপ্রেমীরা। তারা বলেন, যেখানে প্রযুক্তির দাপটে বই পড়ার অভ্যাস কমে আসছে, সেখানে ইয়াসিন আমিন ও আসাদুজ্জামান আরমানের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা শুধু বই বিক্রির জন্য নয়,সমাজে পাঠাভ্যাস তৈরির জন্য কাজ করছেন। তাদের এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জ্ঞানসমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে।
রাহুল নামের এক বইপ্রেমী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, 'এ ধরনের উদ্যোগ ফেনী শহরের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। নন-অ্যাকাডেমিক বইয়ের অভাব পূরণ করার পাশাপাশি, তারা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন, যেখানে পাঠকরা সহজেই বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন।'
ইয়াসিন রিফাত নামের আরেকজন বইপ্রেমী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, 'ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির ধারণাটি খুবই চমৎকার। এটি শুধু একটি বই কেনার জায়গা নয়, বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা পুনরুজ্জীবিত করার একটি মাধ্যম। আমরা আশা করি, তারা শীঘ্রই আরও বড় পরিসরে এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।'