০২ মার্চ ২০২৫, ১৬:১৩

গণইফতার কর্মসূচির আহ্বায়কের বুকে পিস্তল ঠেকিয়েছিল রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি বাবু

নাটকীয়তায় পূর্ণ ছিল ইফতার অনুষ্ঠান

গতবছর শাবিপ্রবি এবং নোবিপ্রবিতে ইফতার পার্টির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গণ-ইফতারের আয়োজন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ১৩ মার্চ রমজানের দ্বিতীয় দিন পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণ-ইফতারের আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকীয়তায় পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানটি। 

সেদিন এই কর্মসূচির আহ্বায়ক ও আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী জায়েদ এইচ জোহাকে বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর করেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাবি শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল গালিব। গতকাল (১ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে সেদিনকার ঘটনা বর্ণনা করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জোহা।

ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘২রা রমাদান, ২০২৪। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণইফতারে ছাত্রলীগের বাধা। বাইরে থেকে বিষয়টা সহজ বা সাধারণ মনে হলেও এ ছিল এক জটিল সমীকরণ। যা চলেছে প্রায় ৩৬ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত।’

‘স্পটে পৌঁছানোর আগেই ভলান্টিয়ারদের গ্রুপে দেখি বলাবলি করছে ছাত্রলীগ বসতে (শহিদ মিনারে) দিচ্ছে না। সবাইকে ভাগিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই গালিব আমাকে ৩ দফা কল দিয়ে ব্যাপক হুমকি ধামকি দিয়েছে এবং আসতে বারণ করেছে। জোহা চত্বর পার হয়ে শহিদ মিনারের দিকে আগাতেই সালাহউদ্দিনের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির সহসমন্বয়ক) সাথে দেখা। সে সংক্ষেপে পরিস্থিতি জানিয়ে বলল, ভাই ওদিকে যাইয়েন না। আমি বললাম, আমি যাচ্ছি তোমরাও এসো।’

বুকে পিস্তল ধরে মারধরের কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি গিয়ে গালিব আর বাবুর সামনে দাঁড়াতেই তারা আমাকে নিয়ে মুক্তমঞ্চের সিঁড়ির আড়ালে নিয়ে যায়। গিয়েই গালিব আমার কলার চেপে ধরে মুখে ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে বাবু পিস্তল বের করে আমার বুকে চেপে ধরে। হুট করে ঢুকে দুজন সাংবাদিক দেখেও ফেলে। কিন্তু তাদের কাছে ডকুমেন্টস না থাকায় এই কথা সামনে আনতে পারে না। সেখানে আমাকে বেশ কিছুক্ষণ হেনস্থা করে বুকে পিস্তল ধরে বলে তাদের শেখানো কথা মিডিয়াকে বলতে। এরপর আমি মিডিয়াকে সেটাই বলি যা তারা শিখিয়ে দেয়।’

‘এরপর আমাকে তাদের মাঝে বসিয়ে ফোন কেড়ে নিয়ে নানান হুমকি দিতে থাকে। হলে নিয়ে গিয়ে মারধর করবে, হাত-পা কাটবে এসব বলতে থাকে আর সাথে আনলিমিটেড অশ্লীল গালাগালি। এসময় তারা আমার বন্ধু হাফিজের খোঁজ করে এবং আরো কয়েকজনের নাম জিজ্ঞাসা করে। আমি যথাসম্ভব গোপন রাখি। এরই মধ্য তারা হাফিজকে পেয়ে যায়। তবে পরিচয় বুঝতে না পেরে তার ফোন চেক করেই ছেড়েও দেয়।’

জোহা আরো লিখেছেন, ‘ইফতার শেষে শুরু হয় আরেক দফা নাটকীয়তা। বর্তমান প্রো-ভিসি ড. ফরিদ উদ্দীন খান স্যার এবং সমাজকর্ম বিভাগের ড. গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস স্যার আমাকে সাথে নিয়ে নামাজে যেতে চান। কিন্তু গালিব বাবু আমাকে ছাড়তে নারাজ। তারা আমাকে হলে নিয়ে যাবে। এদিকে স্যারেরাও আমাকে ছাড়া যাবেন না। এসময় বুঝতে পারি পেছন থেকে আমার কোমরে পিস্তল ধরা আছে। আমি সারাদিনের দৌড়াদৌড়িতে অনেক অসুস্থতাও অনুভব করছিলাম। দোটানার এক পর্যায়ে আমিই রাজি হই ওদের সাথে যেতে। প্রথমত আল্লাহর উপর ভরসা করে, দ্বিতীয়ত স্যারদের হাত থেকে ও মিডিয়ার সামনে দিয়ে আমাকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারবে না এই ভেবে। পরে ফরিদ উদ্দীন খান স্যার গালিবকে কড়াভাবে বলেন, জোহাকে তোমার জিম্মায় দিলাম। কোনো কিছু হলে জবাবদিহিতা তোমার।’

‘এরপর গালিব আর বাবু আমাকে নিয়ে বর্তমান বিজয়-২৪ হল ও শেরেবাংলা হলের মাঝের দোকানগুলোর পেছনে নিয়ে যায়। আবার বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে আমার ডিজিটাল ব্যাংকিং মানিব্যাগ চেক করে। পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। আমি মূলত এই একটা জায়গাতেই ভড়কে যাই। কারণ, ওদের কাছে তখন ওসব কোনো ব্যাপারই ছিল না। এরপর মিডিয়ার ভয়ে আমাকে ছেড়ে দেয় কিন্তু আবার দেখা করার শর্তে। আমি রুমে যেতে না যেতেই অসুস্থ হয়ে যাই। আর দেখা করি না। মেডিকেলে ভর্তি হই তবে সেখানেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে গভীর রাতে সেখান থেকে পালাতে হয়।’

‘একদিন পরেই ছিল আমার নিবন্ধন পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা না দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হই। রোজা ও ঈদ শেষে রাজশাহীতে ফিরলেও করতে পারি না অবাধ বিচরণ। কোনোরকমে ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ক্লাস সেরে আবার রুম। এভাবেই সংকীর্ণ জীবন কাটতে থাকে আমার। আল্লাহর অশেষ রহমতে স্বাধীনতার স্বাদ পাই ঐতিহাসিক ৩৬ জুলাই।’

এসময় তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু সেখানেই কি শেষ? স্বৈরাচার হাসিনার পতিত দোসরেরা থেমে নেই এখনও। তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে গোপনে, দিয়ে যাচ্ছে লাগাতার হুমকি। তবে কি আমরা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগব? তবে কি এই ভয়ে বয়ে বেড়াতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে?’