০৬ মে ২০২৫, ০৭:৫৭

মান-অভিমান কীভাবে দেখেছেন রাসুল (সা.)

অভিমান  © সংগৃহীত

ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি পেশাগত জীবনে বিভিন্ন ঘটনায় মানুষ মান-অভিমানে ভোগে। অনেক সময় এই মান-অভিমান এমন মাত্রায় পৌঁছে যায় যে, প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যন্ত ছিন্ন হয়ে যায়—থেমে যায় যোগাযোগ, মুখ দেখাদেখিও। অথচ ইসলাম মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে সম্মান জানালেও সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টিকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করে।

তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা বৈধ নয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৭৬)

হাদিসবিদগণ ব্যাখ্যা করেছেন, এই তিন দিনের সময়সীমা মানুষের রাগ, ক্ষোভ বা আবেগ সামলানোর একটি অবকাশ মাত্র। মূল শিক্ষা হলো—আবেগের সম্মান থাকতে পারে, কিন্তু তা সম্পর্ক ধ্বংসের কারণ হলে তা পরিত্যাজ্য।

আবেগ হোক সংযত, অভিমান যেন বিদ্বেষে রূপ না নেয়

মান-অভিমান থেকে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হলেও তা কখনোই ঘৃণা বা বিদ্বেষে পরিণত হওয়া উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। তখন তিনি সব মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন, তবে যাদের মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ থাকে, তাদের ব্যাপারে বলেন—‘এই দুইজনকে ছেড়ে দাও যতক্ষণ না তারা পুনর্মিলিত হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৫)

হাসিমুখে সম্পর্ক রক্ষা করাই উত্তম

ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পর্ক রক্ষা করার সবচেয়ে সুন্দর উপায় হলো হাসিমুখে কথা বলা ও সদাচরণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “প্রতিটি ভালো কাজ সদকার অন্তর্ভুক্ত। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও সদকা।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭০)

সম্পর্কচ্ছেদ—হত্যার তুল্য গর্হিত কাজ

কোনো কোনো সম্পর্কচ্ছেদ এমন যন্ত্রণাদায়ক হয় যে, মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোরভাবে বলেন, “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সঙ্গে এক বছর সম্পর্ক ছিন্ন রাখল, সে যেন তাকে হত্যা করল।” (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯১৫)

যে আগে অভিমান ভাঙে, সে-ই উত্তম

মান-অভিমান মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা হলো—উত্তম সে, যে আগে এগিয়ে এসে সম্পর্ক জোড়া লাগায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দেয়, সেই উত্তম।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৭৭)

কখন কথা বন্ধ রাখা বৈধ হতে পারে

তবে দ্বিনের স্বার্থে বা অন্যকে কোনো গুনাহ থেকে সাবধান করার উদ্দেশ্যে যদি কারো সঙ্গে সাময়িকভাবে সম্পর্ক সীমিত রাখা হয়, তবে তা শরিয়তসম্মত। যেমন—তাবুক যুদ্ধে অংশ না নেওয়া তিনজন সাহাবির সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও অন্যান্য সাহাবি ৫০ দিন পর্যন্ত কথা বলেননি। পরে আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়। (আরিদাতুল আহওয়াজি : ৮/৯১)

মান-অভিমান হোক সংযত, হৃদয়ে থাকুক ক্ষমা ও সংযোগের মনোভাব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সম্পর্ক রক্ষা ও মানবিক আচরণের সৌন্দর্য অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।