০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:০৬

ময়লা সরাতে জবি প্রশাসনের গড়িমসি, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

জবির মুক্তমঞ্চের পেছনে জমে থাকা আবর্জনার স্তুপ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে জমে থাকা ময়লা সরাতে গড়িমসি করছে প্রশাসন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের মুক্ত মঞ্চের পেছনে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা জমে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন ও নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অভাবে পরিস্থিতি দিন দিন আরও নাজুক হয়ে উঠছে। 

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চের পেছনে এবং তৃতীয় গেটের ডান পাশে ফাঁকা জায়গায় ক্যাম্পাসের সব ময়লা-আবর্জনা জমিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় ময়লা জমে বিশাল স্তূপে পরিণত হয়েছে, যেখান থেকে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা যায়, পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের পাশে নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা রাখা হতো এবং সেখান থেকে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন নিয়মিতভাবে ময়লা সরিয়ে নিতো। তবে জুলাইয়ের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আগের ঠিকাদাররা দায়িত্ব ছেড়ে চলে যায়। তখন থেকেই দ্বিতীয় গেটের পাশের ডাম্পিং স্টেশন তুলে দিয়ে মুক্ত মঞ্চের পেছনে ময়লা ফেলা শুরু হয়। সেখানে কোনো স্থায়ী ডাম্পিং ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। বর্তমানে মুক্ত মঞ্চের পেছনের ময়লা সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা হয় না।

এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মাত্র পাঁচজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে, যার মধ্যে তিনজনের বয়স ৫০-এর উপরে। ফলে ক্যাম্পাসে নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় কার্যকর কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

ময়লা নিষ্কাশনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আগের ঠিকাদাররা চলে যাওয়ার পর নতুন ঠিকাদারদের সাথে দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমরা তাদেরকে একাধিকবার ফোন করে ডেকেছি, তবে তারা সাড়া দেয়নি।’

ইংরেজী বিভাগের মেহেদী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ময়লার দুর্গন্ধের কারণে আশপাশ দিয়ে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। এজন্য প্রশাসন ৩ নম্বর গেটও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আমাদের অনেক ঘুরে ক্যাম্পাসে ঢুকতে হয়।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী আহাদ বলেন, ‘ছোট্ট একটা ক্যাম্পাস, যার মধ্যে বসার জায়গা নেই বললেই চলে। একমাত্র মুক্ত মঞ্চটায়ও দুর্গন্ধের কারণে বসা যায় না। প্রশাসন রোজার আগে জায়গাটা দেখে গেলেও এখনো কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নেয়নি। সব কিছু আন্দোলনের মাধ্যমেই করতে হয়, তাহলে এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় বলাই শ্রেয়।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলের থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ঠিকাদার মো. রাসেল বলেন, ‘ঈদের আগে যে ছেলেটি কাজ করতো সে রমজান মাসের শেষের দিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান। আমরা নতুন লোক নিয়োগ দিয়েছি, সে গিয়ে ময়লা নিয়ে আসবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ময়লার ডাম্প দিতে পারি না, আগে পারতাম। কারো যদি ময়লা বেশি হয় তাহলে তারা নিজেদের উদ্যোগে ডাম্প কিনে নিবে। গত ২ মাস আগে হওয়া এক মিটিংয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াসউদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আগে যারা দায়িত্বে ছিল, তারা ৫ আগস্টের পর চলে গেছে। এখন সিটি কর্পোরেশনের সাথে আমাদের কোনো চুক্তি নেই। আগে তাদের নিজস্ব ভ্যান ছিল, এখন সেটাও নেই। তাই পরিষ্কারের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আমরা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।’