সনদ জালিয়াতিসহ যে কারণে বছরজুড়ে আলোচিত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
- বাউবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ PM , আপডেট: ০৪ মে ২০২৫, ০২:৩৮ AM

শেষ হতে চলেছে ২০২৪ সাল। শোনা যাচ্ছে নতুন বছরের পদধ্বনি। দেশের প্রতিটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও ইতিবাচক-নেতিবাচক উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেই সব ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মোঃ লিটন হোসেন।
সনদ জালিয়াতির ঘটনা
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ এ সবচাইতে নেতিবাচক ঘটনা ছিল এলএল.বি সনদ জালিয়াতির ঘটনা। মাত্র ৭০ হাজার টাকায় এলএল.বি সনদ বিক্রির ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসলে সারা দেশে একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে দেশের আইন অঙ্গনে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। চারিদিক থেকে নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করে। বেকায়দায় পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরীক্ষা বিভাগ সিলগালা করে দেওয়া হয়, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং ৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বার কাউন্সিল কর্তৃক আইন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের ইন্টিমেশন স্থগিত
সনদ জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসার পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বাউবি থেকে এলএল.বি (স্নাতক) সম্পন্ন করা সকল শিক্ষার্থীদের ইন্টিমেশন কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। যা এখনও পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে।
উপাচার্য হুমায়ুন আক্তারকে অবরুদ্ধ
সেশনজট নিরসন, সেমিস্টার ফি কমানো, স্থগিত হওয়া আইন অনুষদ ‘স্কুল অব ল’ চালুসহ মোট ৬ দফা দাবিতে জানুয়ারির ২৩ তারিখে ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে আইনের শিক্ষার্থীরা তখনকার উপাচার্য সৈয়দ হুমায়ূন আক্তারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা এবং চরম উত্তেজনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বসে পড়ে এবং নানা স্লোগান দিতে থাকে। পরে উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হন এবং দ্রুত পরীক্ষা শুরু হয়।
ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি-অনিয়ম
সনদ জালিয়াতির ঘটনায় যখন গোটা বাউবি প্রশাসনে তোলপাড় তখন আইন প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা আবারো গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে উঠে। মরার উপর খাড়ার ঘা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই আইন প্রোগ্রামে ভর্তি হন।
শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ-পুলিশের হুমকি-ধামকি
সনদ জালিয়াতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয় এবং নিউমার্কেট থানা থেকে পুলিশ ক্যাম্পাসে আনা হয়। সকল রক্তচক্ষু, বাধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
আন্দোলনে বাধা দেওয়া শিক্ষকদের বিচার দাবি
বাউবিতে বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক ফোরাম এবং আওয়ামীপন্হি শিক্ষকরা ১ আগস্ট ‘কোটা সংস্কারের আড়ালে নৈরাজ্যের প্রতিবাদ’ শিরোনামে মানববন্ধন করেন। যা পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচিত হয় এবং শিক্ষার্থীরা এই সব শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বাউবির ৪ শিক্ষার্থী আহত
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। তার মধ্যে আইন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী মোদ্দাছির সরকার ৪ আগস্ট ধানমন্ডি জিগাতলায় গুলিবিদ্ধ হয়।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
খুনি, স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রায় মাস ব্যাপী দফায় দফায় মূল ক্যাম্পাস ও ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্র ক্যাম্পাসে আন্দোলন করতে থাকে। অবশেষে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার পালাক্রমে পদত্যাগ করেন।
দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি
আইন প্রোগ্রামের দুইজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাহিদ ফেরদৌসী ও সহকারী অধ্যাপক বায়েজিদ হোসেন এর বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি, ‘স্কুল অব ল’ আটকে রাখার মূল হোতা, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়ম, শিক্ষার্থী নিপীড়ক ইত্যাদি অভিযোগে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শুধু আশ্বাস আর আশ্বাস। দাবির কোনো বাস্তবায়ন দেখতে না পেরে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন। আবারো কঠোর আন্দোলন করতে থাকেন। মূল ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং আইন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন; শহিদ আবু সাঈদ হল (ছাত্র) এবং শহিদ নাঈমা সুলতানা হল (ছাত্রী) এর লিখিত অনুমোদন দিয়ে দ্রুত স্থগিত হওয়া ‘স্কুল অব ল’ চালু, সিএসই এবং ফুড এন্ড্র নিউট্রিশন প্রোগ্রামের জন্য উন্নতমানের ল্যাব এবং মুট কোর্ট ও ডিবেট ক্লাবের ব্যবস্থা এই সব দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালাতে থাকে।
৪৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সুপারিশ
অসদুপায় (নকল) অবলম্বনের দায়ে বাউবির বিএ-বিএসএস প্রোগ্রামের পরীক্ষায় ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। ২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
হিজাব কান্ডে বিতর্ক
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজ খাগড়াছড়িতে বাউবির ২০২০-২১ সেশনের সমাজতত্ত্বের উম্মে আনজুমানয়ারা নামের এক শিক্ষার্থী হিজাব পরার কারণে শিক্ষক দ্বারা হেনস্তার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সারা দেশে প্রতিবাদ-সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় কলেজের অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষকগণ ক্ষমা চান এবং বিষয়টা মীমাংসা করা হয়।