‘থাপড়িয়ে’ শিক্ষকদের ‘দাঁত ফেলে দেওয়া’র হুমকি কুবি কর্মকর্তার
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১০ PM , আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৭ AM

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নবগঠিত শিক্ষক সমিতির সদস্যদের ‘থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়া’র হুমকি দিয়েছেন কুবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্যের কক্ষে নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপাচার্যের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি এ হুমকি দেন। এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে আবেদন করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন জাকির। তখন তাদের কক্ষে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করেন সহকারী প্রক্টর হাসেনা বেগম। তখন ওই প্রক্টরের সাথে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় ডেপুটি-রেজিস্ট্রার জাকির হোসেনকে।
এসময় চাকরিপ্রার্থী সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষকদের সাথে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। পরে উপাচার্যের দপ্তরের দরজা ভেঙ্গে শিক্ষকদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় তাদের। এসময় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে প্রক্টরিয়াল বডির সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা যায়। তাদের এমন প্রবেশ নিয়ে ভিতর থেকে প্রশ্ন তুলেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় তিন পত্রিকায় বক্তব্য প্রচার কুবি উপাচার্যের
এসময় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তারা গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন তারা বলেন, ‘চিল্লাইতেছেন কেন আপনারা, চিল্লাইতেছেন কেন? আপনারা গুন্ডামি করেন? আমাদের আইন শিখান, কোথায় লিখা আছে—এখানে আসা যাবে না?’
তখন তাদের বের করে দিতে আসা নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলেন প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে জাকির বলেন, ‘চিল্লাইতেছে কেন, আমরা মানুষ না—থাপড়াইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু।’
কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে ক্ষোভ জানিয়ে শিক্ষক সমিতির অর্থ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘উপাচার্য লালন করছে এক্স স্টুডেন্ট। ভিসি কক্ষ তার দুর্গ। ক্যাডার বাহিনী, প্রক্টরিয়াল বডি, কতিপয় কর্মচারী-কর্মকর্তা, অছাত্র ছাত্র! সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষক হামলা। শিক্ষকরা কি কথা বলতে পারবে না?’
আরও পড়ুন: নিয়মের তোয়াক্কা না করে দেড় কোটি টাকায় কুবি ভিসির গাড়িবিলাস
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, এমন কোনো কিছু আমি বলিনি। ওই মুহূর্তে সবাই হইচই করছিল, কে কাকে কি বলেছে আমি জানি না।’
কর্মকর্তাদের অফিস সময় বিকাল চারটায় শেষ হয়ে গেলেও, সেখানে জাকির হোসেনের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভিসি স্যারের সাথে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মিটিং ছিল আজকে। সেজন্য আমরা ভিসি স্যারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলাম।’
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদেরকে ‘হু আর ইউ’ বলেছে, অপমান করেছে, হত্যা করার চেষ্টা করেছে। একজন কর্মচারী কেন এখানে এসে একজন শিক্ষককে বলে ‘হু আর ইউ’। আমরা এখানে এসেছি উপাচার্য স্যারের সাথে আলোচনা করার জন্য। তারা আমাদের সাথে এইরকম ব্যবহার করতে পারে তারা আমাদেরকে যে কোন কিছু করতে পারে।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, আজ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর আমরা উপাচার্যের সাথে দেখা করতে যাই। উপাচার্য আমাদের সাথে দেখা করবেন না জানিয়ে বলেন, ‘কীসের শিক্ষক সমিতি!’ তখন আমরা স্যারকে বোঝানোর চেষ্টা করি দেখা করার বিষয়ে। তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনি একজন মিথ্যাবাদী।’ ওই মুহূর্তে রুমের ভেতর থেকে কেউ একজন কল দিলে কর্মকর্তা জাকির হোসেনসহ কিছু অছাত্র ও বহিরাগতরা এসে উপাচার্যের রুমে জোরপূর্বক প্রবেশ করে শিক্ষকদের উপর চড়াও হন এবং অশালীন মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: এবার গণমাধ্যম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলেন কুবি উপাচার্য
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং আজকের এই ঘটনার পেছনে প্রক্টর দায়ী। তাই আমরা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে এবং আজকের এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে উপাচার্যের রুমে অবস্থান করছি।
এদিকে উপাচার্যের কক্ষে শিক্ষক নেতাদের অবস্থানের কারণে তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ‘ভিসি দপ্তরে হট্টগোল হয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি সেটা সমাধানের চেষ্টা করেছি।’
অছাত্ররা ভিসি দপ্তরে এসে ঝামেলা করতে পারে কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এখানে কেউ অছাত্র আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা যদি কারো বিরুদ্ধে অছাত্রের অভিযোগ পাই—ব্যবস্থা নিবো। আর এখানে যারা আছে তারা অনেকে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারা এখানে যে পরিস্থিতি, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তারা আসতে পারে।
এ বিষয়ে উপাচার্য দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার হোসাইন মোর্শেদ ফরহাদ বলেন, আজকে উপাচার্যের সাথে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল না। আজকে সবই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।