ডিবিতে আটক থাকাকালীন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন নুসরাত তাবাসসুম
ডিবিতে আটক থাকার সময়ে একাধিকবার আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুম। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ডিবিতে আটক থাকার সময়ে একাধিকবার আত্মহত্যার কথা ভেবেছি। কিন্তু তারপরের এই সময়গুলো তার থেকেও বেশি কঠিন। আগের নুসরাত তাবাসসুম হলে কী হতো জানি না, কিন্তু জুলাই আমাকে শিখিয়েছে, মানুষ মরে গিয়েও জিতে যেতে পারে। এখন পদে পদে প্রেরণা হয়ে ৩৬ জুলাই নেমে আসে মনে। যেই দায় মাথায়, যেই স্বপ্ন চোখে, সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে উদ্ধৃত করে ওই পোস্টে নুসরাত বলেন, ‘মানুষ রাজনীতিতে যোগ দেয়, আমার রাজনীতিতে বায়াত হয়েছিল আখতার হোসেন ভাইয়ের হাতে। ঘটনাটা এতই অন্য রকম যে মানুষকে বোঝান সম্ভব না, এমনকি ভাই নিজেও বোঝে না।’
২০২২ সালের ৭ অক্টোবরের কাহিনি উল্লেখ করে নুসরাত বলেন, ‘শহীদ আবরার ফাহাদের শাহাদাত দিবসের অনুষ্ঠানে আমাদের ওপর হামলা হয়। আখতার ভাই, আসিফ ভাই, বন্ধু আব্দুল কাদের ও জাহিদ আহসান আহত হলেন, গ্রেফতার হলেন। সেদিন ঢামেকের আনাচে-কানাচে খুনি পিশাচ সৈকতের পোষা গুন্ডারা আমাদের একজন একজন করে খুঁজে বেড়িয়েছে।’
দুই ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও মাহফুজ আলমকে উদ্ধৃত করে নুসরাত বলেন, ‘আমি আর আশরেফা সেদিন বাঁচতাম না। যদি না নাহিদ ভাই আর মাহফুজ ভাই আমাদের সেদিন উদ্ধার করতেন। আমৃত্যু এই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা ছাড়া গতি নেই।’
আরেক ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ প্রসঙ্গে এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘মানুষ বড় ভাইয়ের সাথে যেভাবে ছায়া হয়ে থাকে, ২০১৯ সাল থেকে সেভাবে আসিফ মাহমুদ ভাইয়ের সাথে অন্ধ ভক্তিতে কাজ করে আসছি। ভাইয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা এসেছে কিন্তু পালন হয়নি, এমনটা জ্ঞানত কখনো করিনি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য সম্পর্কে নুসরাত বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে এত বাজে কথা, এত গালিগালাজ, নোংরামি সহ্য করতে হয়েছে যে এখন এগুলো দেখতেই চাই না। আমি বলব না যে সহ্য হয়ে গেছে, এগুলো সহ্য হওয়ার জিনিস না। কমেন্ট বক্স দেখলে মনে হয় মানুষগুলো আমার শরীর থেকে জ্যান্ত চামড়া ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কাটতে চাচ্ছে আমাকে। এত বিদ্বেষ! এত জিঘাংসা! এত ঘৃণা! কী করেছি, কী অপরাধ বুঝতেই পারি না।‘
তিনি আরও লেখেন, ‘সত্যি কথা বলতে আন্দোলনের ওই ৩৬ দিনই শুধু এগুলো বন্ধ ছিল। চরম বিপদ ছাড়া এ দেশের মানুষ মেয়েদের খুঁত ধরবেই। মেয়েদের পোশাক, অভ্যাস, চলাফেরা কিছুই আসলে সমস্যা না। সমস্যা শুধু মগজ আর কলিজাটা। এগুলো খাটাতে এলে মানুষ গালি দেবেই।’