০৮ আগস্ট ২০২৪, ২২:২৯

‘স্বামী কইছিলো আর ঢাকায় থাকমুনা, একটু জমি কিনইয়া নতুন ঘর করমু’

স্ত্রী সুরাইয়া বেগম

ছয় বছরের শিশু ফারজানা। সবেমাত্র নার্সারিতে পড়ে। এখনও জানেনা তার বাবা আর ফিরে আসবেনা। মার কাছে জানতে চায় বাবা কখন ফিরবে। মেয়ের এমন আকুতিতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা সুরাইয়া বেগম। ছোট্ট মেয়েকে কীভাবে শান্তনা দিবেন এমন ভাষা তার মুখে নাই। গার্মেন্টস কর্মী স্বামীর মৃত্যুতে আক্ষেপের শেষ নেই স্ত্রী সুরাইয়া বেগমের। সংসারের বাজার করতে বেরিয়ে ঘাতকের এক গুলিতেই ভেঙ্গে গেলো ফজলুর রহমান(২৮)’র স্বপ্ন। স্বামীর মৃত্যুতে একমাত্র মেয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে অজানা আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘স্বামী কইছিলো আর ঢাকায় থাকমুনা বাড়ি গিয়ে একটু জমি কিনইয়া নতুন ঘর করমু। মাইয়াডারে একটা ভালা স্কুলে পড়ামু। আমার অবুঝ মাইয়াডার ভবিষ্যৎ কি। কারে আব্বা কইয়া ডাকবে। ঘাতকরা কাইরা নিছে আমার স্বামীর স্বপ্ন। তার আকুতির কথা গুলো বলতে বলতেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে ঢাকার মিরপুর ১৩ নম্বরের মন্দিরের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত গার্মেন্টস কর্মী ফজলুর রহমানের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। নিহত ফজলুরহমান চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের আটকপাট গ্রামের আমিনুল হকের ছেলে।

৮ ভাই বোনের মধ্যে ফজলুর রহমান তৃতীয়। বাবা তরকারি বিক্রেতা আমিনুল হক ১০ বছর আগে ঢাকায়  সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে এক টুকরো আবাদি জমি বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। পরে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান ফজলুর রহমান। ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে কর্মী হিসেবে কাজ নেন। মিরপুরের কাজী পাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। কয়েক দিন আগে স্ত্রীকে বলেছিলেন এক টুকরো জমি কিনে একটা নতুন ঘর করবেন। সংসারে কাচা বাজার নিয়ে ফেরার পথে ঘাতকের গুলিতে স্বপ্ন ভঙ্গ হলো তার।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টাকায় সংসারের বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকার মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকায় মন্দিরের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। খবর পেয়ে তার বোনের জামাতা সাইদুর রহমান তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথেই রাত ৮ টায় তার মৃত্যু হয়। স্বজনরা রাতেই নিহত ফজলুর রহমানের মরদেহ শশীভূষণ থানার জাহানপুর ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন । পরে মঙ্গলবার বিকালে তার বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এসময় তার স্বজনদের অন্তহীন আহাজারিতে কাঁদছে পাড়া প্রতিবেশীরাও।

ফজলুল হকের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, শিশু কন্যা ফারজানাকে কোলে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন স্বামীর শোকে কাতর স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। মায়ের কোলে ও পাশে বসে শিশু ফারজানা বারবার মায়ের কাছে জানতে চায় , বাবা কহন আইবো গো মা। নির্বাক মা সুরাইয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন মেয়ের মুখের দিকে। শিশু মেয়েকে শান্তনা দেয়ার মতো কোন ভাষাই যেন নেই তার।

পাশে বসে ছেলের জন্য বিলাপ করছেন মা সালেহা বেগম। তিনি বলেছিলেন, পোলাডারে কইছিলাম নাতিনডারে নিয়া বাড়িতে চইলা আয়। পোলায় আমারে কইছে কিছু টাকা জমাইয়া বাড়িতে এক্কেবারে আইয়া পরবো। আমার পোলাডা মরা আইলো বাড়িতে। শশীভূষণ থানার ওসি ম. এনামুল হক জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের মরদেহ স্বজনরা নিয়ে আসছেন বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর শুনেছি। মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

নিহতের বোনের জামাতা সাইদুর রহমান জানান, বাড়ি গিয়ে নতুন ঘর করবেন এমন আশা নিয়ে শ্যালক ফজলুর রহমান স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিন বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানের একটি গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ নেন। মিরপুরের কাজীপাড়ার মাতাব্বরের পুকুর পাড় ভাড়া বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। সন্ধ্যায় ঘরের কাঁচা বাজার করে ফেরার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন । খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।