ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সমস্যা কেন নিরসন হয়নি? উপদেষ্টাদের কাছে প্রশ্ন শিক্ষক নেতার
জাতীয়করণসহ ছয় দফা দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশ লাঠিপেটা, জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখী পদযাত্রায় শাহবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে প্রায় ৪০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন।
আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) আবারও একই দাবিতে সংক্ষুব্ধ শিক্ষকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শাহবাগ অভিমুখে চারুকলা অনুষদের সামনে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে প্রতিবেদন লেখা অবধি (দুপুর ১টা) এই কর্মসূচি চলছে। এতে রাস্তার অপর পাশে গাড়ি চলাচল করলেও শাহবাগ মোড় এবং আশেপাশের রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে অবস্থান কর্মসূচিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘গত ৬ মাস কী করেছেন? জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের ছেলেমেয়ে, নাতিপুতিরা বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিয়েছে। রক্ত দিয়েছে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ রক্তের বিনিময়ে আপনাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু আপনারা রক্তের উপর দাঁড়িয়ে পেটুয়াবাহিনী দিয়ে জাতি গড়ার কারিগরদের উপর নৃশংস হামলা করলেন। আপনারা চব্বিশের রক্তের সাথে বেঈমানী করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষকদেরকে লাঠিপেটা করা হয়েছে। এই বিচার এই বাংলায় হবেই হবে।’
আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘১৯৮৪ সালে ৭৮ অর্ডিনেন্স ১৭ এর ২ ধারা মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। সে সময় থেকে শুরু করে বর্তমানেও ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোতে এনসিটিবি কর্তৃক পাঠ্য পুস্তক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করানো হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের যোগ্যতা সমমান।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রের মাধ্যমে পাঁচ শত টাকা ভাতা প্রাপ্ত হন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩ সালে ২৬,১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়। তবে সমমানের ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ১,৫১৯টি মাদ্রাসাকে পাঁচ শত টাকা অনুদান দেওয়া হয়। বাকি মাদ্রাসাগুলো এই অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়। বর্তমানে ১,৫১৯টি অনুদানভুক্ত মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকরা ৩,৫০০ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা ৩,৩০০ টাকা অনুদান পান। ৪০ বছর ধরে অনুদানভুক্ত এবং অনুদানবিহীন মাদ্রাসার শিক্ষকরা বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন এবং মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের ঘোষনা না দেওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান এই শিক্ষক নেতা।
প্রসঙ্গত, শিক্ষকরা গত ছয় দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শিক্ষকদের ঘোষিত ছয় দফা দাবিগুলো হল: মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণ করা, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদ্রাসাগুলোকে অবিলম্বে কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো পিটিআই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্থায়ী রেজিস্ট্রেশন প্রদান এবং ভৌত অবকাঠামো নিশ্চিত করা।