০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৫৪

শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যয় ৪ হাজার কোটি—দুদকের অনুসন্ধান শুরু

শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষ উদযাপন ও সেই উপলক্ষে দেশজুড়ে ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যয়ের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।

বুধবার (৯ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম। তিনি জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইতোমধ্যেই সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দুদক জানায়, উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত এই টিমে রয়েছেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সারা দেশে প্রায় ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়, যাতে ব্যয় হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আলাদা প্রকল্প অনুমোদন ছাড়াই বাস্তবায়িত হয়েছে।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটায় সময়সীমা বাড়িয়ে তা ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

উল্লেখযোগ্য ব্যয়বিবরণীর মধ্যে রয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যার মধ্যে নকশা ও ডিজাইনের জন্যই ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে ১০ ফুট উচ্চতা ও ৮ ফুট প্রস্থের একটি ম্যুরাল নির্মাণে সময় লেগেছে তিন মাস, ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বেতার নির্মাণ করেছে একটি মুর‌্যাল, যার ব্যয় ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

সরকারি বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, দেশের প্রায় সব জেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং বিভিন্ন শিক্ষা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় এসব ম্যুরাল ও ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে একটি ম্যুরাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ লাখ থেকে শুরু করে ৩ কোটি টাকারও বেশি।

অভিযোগকারীদের ভাষ্যমতে, এই ব্যয় অপ্রয়োজনীয় ও অপচয়মূলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এর পেছনে দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দুদক জানিয়েছে, অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।