বইমেলায় ঢাবি অধ্যাপকের ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষানীতির রূপকল্প’
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫ এ প্রকাশিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির লেখা নতুন বই ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষানীতির রূপকল্প’। বইটি প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশন। লেখকের নতুন এ বইটি সময় প্রকাশনের ২১নং প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষানীতির রূপকল্প শীর্ষক গ্রন্থটিতে মূলত বাংলাদেশে কথিত ও ব্যবহৃত সমস্ত ভাষার মর্যাদাগত, প্রায়োগিকতাগত ও অবয়বগত উন্নয়নে সহায়ক বাঙালী জাতীয়তাবাদী ভাষা রাজনৈতিক আদর্শের আলোকে ভাষানীতির রূপকল্পকে তুলে ধরা হয়েছে।
সাতটি পর্বে বিভক্ত এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায় থেকে চতুর্থ অধ্যায় পর্যন্ত—এই চার অধ্যায় নিয়ে গঠিত প্রথম পর্বের শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশের জনমিতিক, ভাষিক ও ভাষা রাজনৈতিক পরিচয়’। এই পর্বে বাংলাদেশের জনমিতিক, ভাষিক ও রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম অধ্যায় পর্যন্ত— এই চারটি অধ্যায় নিয়ে গঠিত দ্বিতীয় পর্বের শিরোনাম হলো ‘ভাষানীতি প্রণয়নে সহায়ক তাত্ত্বিক কাঠামো’। এই পর্বে বাংলাদেশের ভাষা-পরস্থিতি উন্নয়ন সহায়ক ভাষানীতির তাত্ত্বিক কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
এরপর একমাত্র নবম অধ্যায় নিয়ে গঠন করা হয়েছে তৃতীয় পর্ব, যার শিরোনাম হলো— ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী ভাষা রাজনৈতিক আদর্শের নিরিখে ভাষাসৈনিক ভিত্তি’। এই পর্বে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী ভাষা রাজনৈতিক আদর্শের আলোকে ভাষানীতির রূপকল্প সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। একবিংশ অধ্যায় থেকে চতুর্বিংশ অধ্যায় নিয়ে গঠিত ‘ভাষা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ভাষিক নির্দেশিকা ও প্রশাসনিক কাঠামো’— শীর্ষক সপ্তম পর্বে দশম অধ্যায় থেকে একবিংশ অধ্যায়ে বর্ণিত বিভিন্ন ভাষার ভাষিক উন্নয়নে সহায়ক যে ভাষা পরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে অধ্যাপক রেজাউল করিম ফকির বলেন, দেশের প্রেক্ষাপটে বিদেশি ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন দেশের বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে অধ্যয়নের মাধ্যমে লব্ধ জ্ঞান থেকে বুঝতে পারি, জাতীয় ভাষা, রাষ্ট্র ভাষা ও দাপ্তরিক ভাষার গঠন, মর্যাদা, প্রায়োগিকতা সম্পর্কে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে কোনো ধারণা ও উপলব্ধি নেই। অধিকন্তু বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে প্রায়োগিকতা রয়েছে এমন বিদেশি ভাষা ও ধ্রুপদী ভাষাসমূহের শক্তি ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে কোনো ধারণা নেই।
তিনি বলেন, এই গ্রন্থের বাণী যদি সরকারের নিকট পৌঁছায়, তাহলে আমার বিশ্বাস সরকার দেশের কল্যাণে একটি জাতীয়তাবাদী ভাষা রাজনৈতিক আদর্শের আলোকে একটি ভাষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আর এই উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে, দেশে ভাষিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ হবে এবং একই সাথে ভাষিক অপসংস্কৃতির বিস্তার রোধ হবে।
অধ্যাপক রেজাউল করিম ফকির ১৯৬৩ সালের ৩১ জুলাই ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলাস্থ রূপসি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে জাপানিজ ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের যুগ্ন-পরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের বাইরেও এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন।
তার রচিত গ্রন্থগুলি হলো- Modality and Its Learner Variety in Japanese. Bern, Brussels, Frankfurt, New York and Oxford: Peter Lang AG, April 2012. বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থার চালচিত্র ও সংস্কারের রূপরেখা। ভাষা-সংসর্গ বিদ্যার নিরিখে বাংলা ভাষার সৃজন, ঋদ্ধায়ন ও অবনমন পরিক্রমা। বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও ভাষা ইনস্টিটিউট। ভাষিক রাজনীতি ও ভাষা-পরিস্থিতি: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ।