ধর্মবিরোধিতার অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অভয়ারণ্য পাঠাগার থেকে বই লুটপাট করা হয়

ধর্মবিরোধিতার অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অভয়ারণ্য পাঠাগার থেকে বই লুটপাট করা হয়
ধর্মবিরোধিতার অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অভয়ারণ্য পাঠাগার থেকে বই লুটপাট করা হয়  © লুটপাট

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় ‘নাস্তিক’ লেখকদের বই রাখায় একটি পাঠাগার থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক বই ‘লুট’ করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খেলাফত মজলিসের এক নেতার বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে উপজেলার বাঁশহাটি এলাকায় ‘অভয়ারণ্য পাঠাগারে’ এই লুটপাট চালানো হয়। বই লুটপাটের ঘটনায় শুক্রবার প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী থানার ওসি এস এম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘হুজুররা পাঠাগারে থাকা হুমায়ুন আহম্মেদ, জাফর ইকবালের বই নিয়ে ইউএনও অফিসে রেখেছে। তাদের দাবি, ওই লেখকরা নাস্তিক। নাস্তিকদের বই রাখা হয়েছে সেখানে। কতগুলো বই নিয়েছে সেটা জানি না।’ রবিবার ইউএনও কার্যালয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলেও জানান ওসি।

‘যৌক্তিক দ্বিমতকে স্বাগত’ স্লোগানে ২০১৫ সালে অভয়ারণ্য পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০২২ সালে একবার এই পাঠাগারটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। এবার সেখান থেকে বই ‘লুটের’ ঘটনা ঘটল।

পাঠাগার কর্তৃপক্ষ অভিযোগে বলেছে, বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন ‘অভয়ারণ্য পাঠাগার’ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্ট করেন।

সেখানে তিনি লেখেন, ‘ধনবাড়ীতে নাস্তিক্যবাদের কোন জায়গা হবে না। এটাই ফাইনাল বক্তব্য আমাদের। নাস্তিক বানানোর এক কারখানার সন্ধান পেয়েছি আমরা। অতিদ্রুত আপনাদের কারখানায় তালা লাগিয়ে ধনবাড়ী ছাড়ুন। অনেকদিন অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করে ভন্ডামি করেছেন আপনারা। আর এই সুযোগ পাচ্ছেন না। কথা ক্লিয়ার।’

ওইদিন রাত ৮টার দিকে খেলাফত মজলিসের যুব সংগঠনের ২০-২৫ নেতাকর্মী পাঠাগারে হামলা চালায়। এ সময় পাঠাগারটির সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ পাঠাগারে উপস্থিত ছিলেন। তারা পাঠাগারে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালসহ কয়েকজন লেখকের চার শতাধিক বই রিকশায় করে নিয়ে যায়।

অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ২০-২৫ জন হুজুর পাঠাগারে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। এ সময় তারা ভিতরে ঢুকেই বলে, ‘ওই, সব বই ব্যাগে তুল। এঁনে কোনো বই থাকব না। জাফর ইকবাল নাস্তিক, জাফর ইকবালের সব বই নে। এখান থেকে মানুষ নাস্তিকের বই পড়ে।’

দুর্জয় বলেন, ‘এই বলে বইগুলো সব নিতে থাকে তারা। পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে থাকে। তখন থানার কয়েকজন সদস্য সাদা পোশাকে এখানে আসেন। তারাও তাদেরকে নানা প্রশ্ন করেন। তখন হামলাকারীরা বুঝতে পারে তারা থানার লোক। তখন গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতিতে তারা পুড়িয়ে না দিয়ে চার শতাধিক বই লুটপাট করে।’

পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র বলেন, ‘রাতে তারা পাঠাগারের বই লুটপাট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারা বইগুলো পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বইগুলো নিয়ে গেছে। এখনও বইগুলো উদ্ধার হয়নি। তবে জানতে পেরেছি বইগুলো ইউএনও অফিসে রয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা যুব খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ আমীন বলেন, ‘পাঠাগারটির সদস্যরা ইসলামবিদ্বেষী লেখা ফেইসবুকে পোস্ট করত। পাঠাগারে হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালসহ বিভিন্ন লেখকের বই ছিল যেগুলোতে নারীদের অধিকার আর ইসলাম বিদ্বেষী লেখা ছিল। সেসব বই নিয়ে ইউএনও অফিসে জমা দিয়েছি।’

ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘কিছু লোকজন রাতে পাঠাগার থেকে বই নিয়েছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। বইগুলো তারা ইউএনও কার্যালয়ে রেখে গেছে এটা জেনেছি। তবে সেখানে কী পরিমাণ বই রয়েছে সেটা জানি না। দুইপক্ষকেই আসতে বলা হয়েছিল। একপক্ষ আসলেও আরেকপক্ষ উপস্থিত ছিল না। পরে উভয়পক্ষকে রবিবার কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ